Can't found in the image content. হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে ফুলবাড়ীর ঐ‌তিহ্যবাহী বাঁশ বেতের কু‌টির শিল্প। | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে ফুলবাড়ীর ঐ‌তিহ্যবাহী বাঁশ বেতের কু‌টির শিল্প।

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: মঙ্গলবার, জুলাই ২৬, ২০২২

হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে ফুলবাড়ীর ঐ‌তিহ্যবাহী বাঁশ বেতের কু‌টির শিল্প।
দে‌শের এক সম‌য়ের সম্ভাবনাময় ও বৈ‌দে‌শিক মুদ্রা অর্জনকারী দিনাজপু‌রের ফুলবাড়ী উপ‌জেলার বাঁশ বেত কু‌টির শিল্প এখন কা‌লের বিবর্ত‌নে হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে।

প্লা‌স্টিক প‌ণ্যের অবাধ ব্যবহার ও ক‌রোনা ভাইরাসের দীর্ঘ মেয়াদী প্র‌ভাব এই শিল্পের বিলু‌প্তিকে তরা‌ন্বিত কর‌ছে।

এক সময় ফুলবাড়ী উপ‌জেলার শিবনগর ইউনিয়নের পুরাতন বন্দর এলাকায় বাঁশ দ্বারা তৈরি হ‌তো শিখাই, ফলদা‌নি, বা‌স্কেট, বক্স, বিউ‌টি বক্স, কস‌মে‌টিক্স বক্স, টি ট্রে, বি‌য়ের ডালা, লাইট সেট, মাথার ক্লিপ, কলম‌দা‌নি সহ চোখ ধাঁধাঁনো নানা ডিজাইনের আসবারপত্র।

নি‌র্দিষ্ট ডিজাই‌নের এসব পণ্য এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারা দে‌শে সরবরাহ করা হ‌তো। সেইসাথে এখা‌নকার তৈ‌রিকৃত পণ্য ৮০/৯০'র দশ‌কে বাংলা‌দেশ ক্ষুদ্র ও কু‌টির শিল্প কর্পো‌রেশন (‌বিসিক) এর মাধ্য‌মে কানাডা, অ‌স্ট্রে‌লিয়া, জাপান, ইতা‌লি,জার্মা‌নি, হল্যান্ড প্রভৃ‌তি দে‌শে রপ্তা‌নি হ‌তো। ফ‌লে দে‌শি বি‌দে‌শি ক্রেতা, রপ্তা‌নিকার‌ক, বায়ার, বি‌ভিন্ন সরকা‌রি বেসরকা‌রি সংস্থার কর্মকর্তা‌দের পদচারণায় মুখ‌রিত থাক‌ত এই এলাকা। 

গত দুই দশক ধ‌রে দেখা যায় না তা‌দের সেই কার্যক্রম। বর্তমা‌নে বৈ‌দে‌শিক বাজার হা‌রি‌য়ে শুধু মাত্র বৈশাখী মেলা কেন্দ্রিক হ‌য়ে ধী‌রে ধী‌রে বিলু‌প্ত হ‌তে ব‌সে‌ছে এ শিল্প। অন্য‌দি‌কে, প্লা‌স্টি‌কের তৈ‌রি পণ্য সামগ্রীর অবাধ ব্যবহার ও সহজলভ্যতায় দেশীয় বাজা‌রে বাঁশ বেঁত শি‌ল্পের চা‌হিদা নেই বল‌লেই চ‌লে।

ফ‌লে এ শি‌ল্পের কা‌রিগররা জী‌বিকার তা‌গি‌দে বাধ্য হ‌য়ে শ্র‌মিক, মজুর, স্ব‌র্ণের কা‌রিগরসহ বিভিন্ন পেশায় জ‌ড়ি‌য়ে পড়‌ছেন। এভা‌বে শত বছ‌রের ঐ‌তিহ্য আজ বিলু‌প্তির প‌থে। ‌কেউ কেউ বাপ-দাদার অতীত ঐ‌তিহ্য‌কে ধ‌রে রাখার চেষ্টা কর‌লেও তা‌দের অবস্থা এ‌কেবা‌রেই করুণ।

১৯৮২ সা‌লে বাংলা‌দেশ ক্ষুদ্র ও কু‌টির শিল্প ক‌র্পো‌রেশন (বি‌সিক) কর্তৃক "শ্রেষ্ঠ কারু‌শিল্পী সনদ" অর্জনকারী উপ‌জেলার দ‌ক্ষিণ বাসু‌দেবপুর (পুরাতন বন্দর) গ্রা‌মের বা‌সিন্দা ধী‌রেন সামন্ত ব‌লেন, বৈ‌দে‌শিক বাজার হা‌রি‌য়ে যাওয়ার পর এই গ্রা‌মের ক‌য়েকজন ঢাকার বৈশাখী মেলার উদ্দে‌শ্যে সারা বছর ধ‌রে পণ্য তৈ‌রি করতাম।

ক‌রোনার প্রভা‌বে ক‌য়েক বছর থে‌কে তেমন মেলা না হওয়ায় এ‌শি‌ল্পের প্র‌তি আগ্রহ ক‌মে গে‌ছে।এতে অনেকটাই লোকসানে পড়তে হয়েছে।

তি‌নি বলেন, ১৯৯০ সা‌লের পর সরকা‌রি বা বেসরকা‌রি কোন প্র‌তিষ্ঠান এই শিল্প‌কে বাঁচা‌তে এ‌গি‌য়ে‌ আ‌সে‌নি। বর্তমা‌নে মাত্র দু তিন‌টি প‌রিবার এ শি‌ল্পের সা‌থে জ‌ড়িত। ব্যাংক থে‌কে এ শি‌ল্পের না‌মে কোন বি‌শেষ ঋণ না দেয়ায় স্থানী দাদন ব্যবসায়ী‌দের কাছ থে‌কে চড়া সু‌দে ঋণ নি‌তে হয়। ফ‌লে বাধ্য হ‌য়ে এ পেশা ছাড়‌ছেন অ‌নে‌কে।

খোঁজ নি‌য়ে জানাযায়, একই এলাকার মরহুম ফারা‌য়েজ মাওলানার ছে‌লে মো. মা‌নিক মিয়া, লালু মন্ড‌লের ছে‌লে তপন সামন্ত, মরহুম আজগর আলীর ছে‌লে মো. সারওয়ার হো‌সেন সবুজ, কালিদাস, দিলীপ সামন্ত, গৌড়াঙ্গ সামন্ত, কমল সামন্ত সহ অ‌নে‌কে এ পে‌শা ছে‌ড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হ‌য়ে‌ছেন।

কু‌টির শিল্প ছে‌ড়ে বিদ্যুৎ মি‌স্ত্রি হওয়া সারওয়ার হো‌সেন সবুজ জানান, এক সময় বি‌সি‌কের অঙ্গসংগঠন বাংলা‌দেশ হ্যা‌ন্ডি ক্রাফট ক‌র্পো‌রেশন কর্তৃক প্র‌তি‌টি বিভাগীয় শহ‌রে এসব প‌ণ্যের বিক্রয় শো-রুম ছিল, যা এখন নেই। প‌ণ্যের বিক্রয় মূল্য তেমন না বাড়‌লেও উৎপাদন ব্যয় বে‌ড়ে‌ছে তিন-চার গুণ। এ পেশায় সংসার চ‌লেনা ব‌লে অন্য পেশায় যুক্ত হ‌য়ে‌ছি।

একই এলাকার কা‌লিদাস জানান, বাঁ‌শের জি‌নিসপ‌ত্রের প্র‌তি মানু‌ষের চা‌হিদা নাই। মূলধন থা‌কেনা এই কা‌জে। তাই বাঁ‌শের কাজ বাদ দি‌য়ে এখন মিল চাতা‌লে ধান শুকা‌নোর কাজ ক‌রেন।

নাম প্রকা‌শ না করার শ‌র্তে বাংলা‌দেশ ক্ষুদ্র ও কু‌টির শিল্প কর্পো‌রেশ‌নের একজন কর্মকর্তা মু‌ঠোফো‌নে জানান, ১৯৮০'র দশ‌কে হ্যান্ডি ক্রাফ‌টের (হস্তজাত শিল্প) ব্যাপক চা‌হিদা ছিল। এখন বি‌দে‌শে বিপণন নাই, দে‌শেও বিপণন নী‌তি উন্নত না হওয়ায় এবং প্লাস্টি‌কের সহজলভ্যতায় এ শিল্প আজ বিলু‌প্তির প‌থে। সরকার প্র‌ণোদনার আকা‌রে স্বল্প সু‌দে ঋণ দি‌লেও বি‌ভিন্ন শর্ত থাকায় এ‌ শি‌ল্পের শিল্পীরা সু‌বিধা থে‌কে ব‌ঞ্চিত হ‌চ্ছেন ব‌লে আ‌ক্ষেপ প্রকাশ ক‌রেন তি‌নি।

এই ঐ‌তিহ্যবা‌হী শি‌ল্পের হারা‌নো গৌরব ফি‌রি‌য়ে আন‌তে প‌ণ্যের বাজার সৃ‌ষ্টি করা, প্লাস্টি‌কের অবাধ ব্যবহার কমা‌নো, প্র‌শিক্ষ‌ণের ব্যবস্থা করা, প্রণোদনা বা সহজ শ‌র্তে ঋ‌ণের ব্যবস্থা করার দা‌বি জানান এ শি‌ল্প সংশ্লিষ্টরা।