মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা নবায়নে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনা ও চিঠি চালাচালি করে সমাধানের চেষ্টা চলছে। জানালেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
রোববার (২৪ জুলাই) হাইকমিশনার জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকারের সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে আগামীকাল (২৫ জুলাই) মালয়েশিয়ার সরকারকে কূটনৈতিক চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানাবে হাইকমিশন। হাইকমিশনার জানিয়েছেন, প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিতে হাইকমিশন সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে গত ১ জুলাই কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশন (বিদেশি শ্রমিক) বিভাগের পরিচালক হামিদি বিন আদমের সই করা এক নোটিশে বলা হয়, প্ল্যান্টেশন ১৪ নম্বর ও রিহায়ারিং প্রোগ্রামে যারা ৫ নম্বর ভিসা পেয়েছেন তাদের ৬ নম্বর ভিসা আর নবায়ন হবে না। অর্থাৎ ৬ নম্বর ভিসা পাওয়াদের ফেরত যেতে হবে নিজ দেশে। এতে প্রবাসী রেমিট্যান্সে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে নোটিশের আদেশ বাস্তবায়ন করতে দেশটির সব কয়েকটি ইমিগ্রেশন বিভাগকে বলা হয়েছে। অন্যদিকে যারা ছুটিতে দেশে গিয়েছেন তাদের ফিরে আসা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রবাসীরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত নতুন কর্মী রফতানির আগে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত লক্ষাধিক কর্মীদের ৬ বা ৭ নম্বর ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন দেওয়ার বিষয়টা নিশ্চিত করা। যা এখনও অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছে। একদিকে দেশটিতে শ্রমিকের প্রচুর ঘাটতি, অন্যদিকে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন বন্ধ করে রেখেছে।
পুরোনো কর্মীরা ফেরত গেলে মালয়েশিয়া থেকে প্রবাসী আয় তলানিতে যাবে এবং নতুন কর্মী যাওয়ার খরচে শুধু দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হবে। আর এই টাকা কর্মীদের আয় করতে লাগবে কয়েক বছর।
সাধারণ কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে টাকা দেশে পাটিয়ে দেশকে সচল রাখে। প্রবাসীদের টাকাই দেশের জন্য প্রয়োজন আর সরকারের কাছে এ কর্মীদের কোনো কিছুই গুরুত্ব পায় না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া বৈধকরণ (রিহায়ারিং) প্রকল্পে যারা বৈধ হয়েছিলেন, তারা ৬ নম্বর ভিসা পাবেন না। আর ভিসা না পেলে বৈধরা হয়ে যাবেন অবৈধ। এতে বরাবরের মতো ভিসা রিনিউ করে দেওয়ার নামে অবৈধ অর্থের লেনদেন বেড়ে যাবে। ফলে আবারও কর্মীদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস থেকেও কোনো ধরনের নির্দেশনা ইস্যু করা হয়নি।
২০১৬ সালে সাত লাখ ৪৮ হাজার ৯৯২ জন বিদেশি কর্মী বৈধকরণ (রি-হায়ারিং) প্রকল্পে নিবন্ধিত হয়েছিলেন। সে সময় অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি ও অন্যান্য দেশের এজেন্টরা ভিসা না করে প্রবাসী কর্মীদের থেকে লাখ লাখ রিঙ্গিত হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব প্রতারণার কোনো প্রতীকার পাননি প্রবাসীরা।
এখানে-সেখানে জঙ্গলে পালিয়ে অবস্থান করতে হয়েছিল তাদের। এদের মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হন, শাস্তি পান। পরে খালি হাতে দেশে ফেরেন। পরে মালয়েশিয়া অবৈধদের ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির মাধ্যমে জেল শাস্তি ব্যতীত শুধু জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সুযোগ দেয়। ওই সময়ও কোম্পানির গাফিলতি ও ইমিগ্রেশনের নিয়মের কারণে অবৈধ হয়ে অনেককে শাস্তি ভোগ করতে হয় ও খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়।
সম্প্রতি শেষ হওয়া রিক্যালিব্রেসি কর্মসূচির মাধ্যমে ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে অবৈধদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয়। যারা সুযোগ নিয়েছে তারাও নানা প্রতারণা আর ইমিগ্রেশনের নিয়মের কারণে অবৈধ হয়েছিলেন। এ সুযোগটি গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এরপর অবৈধদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর নিয়মিত প্রক্রিয়া শুর করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ।
এমন কঠোর পরিস্থিতির মধ্যেই রিহায়ারিং কর্মসূচির আওতায় ভিসা নিয়ে বৈধভাবে থাকা ও ভিসা নবায়ন না করার ঘোষণায় ফের বিপদে ফেলে দিয়েছে প্রবাসী কর্মীদের।
মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী নিয়োগকর্তা ব্যতীত ভিসা পাওয়া এবং অবস্থান করার সুযোগ না থাকায় নিয়োগকর্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অভিবাসী বিষয়ক সংস্থার কর্তারা। তাদের দাবি ৪৫ বছর বয়স বা ১০ বছরব্যাপী মালয়েশিয়া থাকার যে স্বাভাবিক নিয়ম আছে সে অনুযায়ী ভিসা নবায়ন করা হোক।
তাহলে নিয়মের মধ্যেই কর্মীরা অবস্থান করে, মালয়েশিয়ার অর্থনীতি সচল ও চাঙা রাখতে পারবে। যেহেতু নতুন করে কর্মী নিয়োগে ধীরগতি সেহেতু এসব কর্মীদের ভিসা নবায়ন করার সুযোগ দিলে মালয়েশিয়ার লাভ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে এক্ষেত্রে দূতাবাসের সঠিক পরামর্শ ছাড়া ভিসা রিনিউ করার লোভে পড়ে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।