জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ভুল সংশোধনে গিয়ে সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার হন বলে জানিয়েছে সাম্যবাদী দল। এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দলটি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করে ভোগান্তি কমাতে এনআইডি মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এমন অভিযোগ করেন।
এর আগে বিকেল ৪টায় দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংলাপে অংশ নেয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চার কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তারা।
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, এনআইডি সংশোধনে জনগণকে হয়রানি থেকে রেহাই দিতে হবে। একই সঙ্গে যারা হয়রানি করছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সিইসিকে উদ্দেশ করে সংলাপে দলটির একজন সদস্য বলেন, আইডি কার্ড যারা সংশোধন করতে যান তারা হেনস্তার শিকার হন। বিষয়টি ভালো করে দেখবেন আপনারা। বিদেশ থেকে, গ্রাম থেকে যারা আসেন তারা ভোগান্তির শিকার হন।
এসময় জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে টাকা লেনদেন হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিষয়টি স্বীকার করে সিইসি বলেন, ভুলের পরিমাণ এত বেশি যে, আমার মনে হয় কোটি কোটি ভুল। এটা নিয়ে বিপদে পড়ছি। নামের বানানে এটা ওটা মিলছে না। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুবান্ধবের ৪০-৫০টা সংশোধন করে দিয়েছি।
কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনে বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাঝখানে করোনা ছিল। তখন কার্যক্রমটা ছিল কম। মায়ের নাম, বাবার নাম সংশোধন, অনেকেই এসেছেন নামের শুরুতে মোহাম্মদ বাদ দিতে কিংবা মোহাম্মদ সংক্ষিপ্ত আকারে দেওয়ার আবেদন করেছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রমকে বিশাল কর্মযজ্ঞ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমাদের কিছু ভুলভ্রান্তি আছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
এসময় এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীরের কাছে সিইসি জানতে চান এনআইডি নিয়ে এত অভিযোগ কেন।
জবাবে হুমায়ুন কবীর বলেন, এখানে ইচ্ছাকৃত ভুলের পাশাপাশি অনেক অনিচ্ছাকৃত ভুল আছে। বয়স ও নামের বানান সংশোধনে বেশি আবেদন পড়ছে। ভুল হতে পারে, আমরা চেষ্টা করছি সংশোধনের।
যেসব দল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) অনাস্থা প্রকাশ করেছে তারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে বলে দাবি করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।
পাশাপাশি বিগত দুই নির্বাচনে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে ব্যত্যয় ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দলটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে
নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নির্বাচন পূর্বে ও পরে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার ব্যবস্থা করা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী প্রকৃত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া, ভোটের সময় সব প্রকার বল প্রয়োগ, অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ফৌজদারি দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং দুর্নীতির দায়ে যে কোনো সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া, নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকদের প্রভাব বন্ধ রাখা ইত্যাদি।
এছাড়া দলটির পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্তকরণ, ইভিএম চালু ও যুদ্ধাপরাধীদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভবিষ্যতে তারা (বিএনপি) কি করবে জানি না। তবে এটা ঠিক আমাদের দেশে বিদেশি কোনো শক্তি কাউকে গদিতে বসাতে পারবে না।