ভোরবেলা ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে ওঠা একটু কষ্টকরই বটে। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ, ফজর পড়েন; তাদের বিষয়টি ভিন্ন। কিন্তু অনেকেই শারীরিক ক্লান্তি বা ঘুমের আধিক্যের কারণে ভোরবেলা ফজর নামাজ পড়তে যথাসময়ে উঠতে পারেন না। তাদের জন্য করণীয় কী? ভোরবেলা/ফজরে ঘুম থেকে উঠতে কোনো আমল কিংবা দোয়া আছে কি? থাকলে তা কী?
ফজর হলো দিনের প্রথম ইবাদত ও নামাজ। এ নামাজের মাধ্যমে কারো দিন শুরু হলে মহান আল্লাহ সারাদিন ওই ব্যক্তিকে নিজ জিম্মায় রাখেন। আবার কেউ দিনের শেষ নামাজ ইশাও যদি জামাতে আদায় করেন তবে সে রাতেও মহান আল্লাহর জিম্মায় থাকে। এ জন্য দিনের শুরুর ফজর নামা এবং দিনের শেষ নামাজ ইশার মর্যাদা অনেক বেশি। মর্যাদার এ নামাজ আদায়ে ভোরে ঘুম থেকে ওঠা খুবই জরুরি।
প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ রাতেব আন-নাবুলসি খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার সহজ কিছু আমলের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আবার ইসলামিক স্কলাররা কোরআনুল কারিমের একটি আয়াতের আমল করতেন। যা তুলে ধরা হলো-
শায়খ রাতেব আন-নাবুলসি ভোরে সহজে ঘুম থেকে ওঠার দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন-
১. রাতে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া।
২. ভোরে জেগে ওঠার বিশুদ্ধ নিয়ত রাখা। এ প্রসঙ্গে শায়খ বলেন, বিষয়টি বাড়িয়ে বলা নয়; বরং কেউ যদি ভোর ৪টায় ঘুম থেকে ওঠার জন্য সময় নির্ধারণ করে; তবে সে অবশ্যই ৪টা বাজার এক মিনিট আগে হলেও জেগে ওঠবে। (ইন শা আল্লাহ!)
কারণ বান্দার বিশুদ্ধ নিয়তের কারণেই সে ফজরের ওয়াক্তে জেগে ওঠবে। মহান আল্লাহ বান্দার একনিষ্ঠতা দেখবে; তখন কোনো অ্যালার্ম বা সংকেত ছাড়াই ওই বান্দা আল্লাহর ইচ্ছায় জেগে ওঠবে।
শুধু তা-ই নয়, শায়খ রাতিব আরো বলেন, ‘বিজ্ঞানের গবেষণায় একটি বিষয় প্রমাণিত যে, মানুষের মস্তিষ্কেও অ্যালার্ম বা সংকেত আছে। সেটি এমন-
‘যদি কোনো মানুষের পূর্ব নির্ধারিত সময়ে জরুরি কোনো কাজ থাকে, তখন দেখা যায় নির্ধারিত সময়ে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় আগে ঘুম ভেঙে যায়। যদিও ওই ব্যক্তি এক ঘণ্টার কিছু আগে পরে ঘুমায়। আর অবশ্যই এটাই ঘটে থাকে।
মনে রাখতে হবে, ফজরের সময়টি মুমিন মুসলমানের জন্য খুবই জরুরি। সারাদিন মহান রবের জিম্মায় থাকার হাতছানি। তাই এ সময় ঘুম থেকে ওঠার বিশুদ্ধ নিয়ত, একনিষ্ঠতা ও পেরেশানিই বান্দার ঘুম থেকে ওঠার জন্য সহায়ক। মুমিন বান্দা এ বিষয়টির ওপর জোর দেবে যে-
‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়লো সে সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর জিম্মায় থাকলো। আর যে জামাতে ইশার নামাজ পড়লো; সে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকলো।’
ভোরে জেগে ওঠার কোরআনি আমল
তবে ফজরের সময় জেগে ওঠার নিয়তে ইসলামিক স্কলারগণ ঘুমাতে যাওয়ার আগে কোরআনুল কারিমের একটি আয়াত পড়তেন। তাহলো-
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
উচ্চারণ: ‘লাহুমুল বুশরা ফিল হায়াতিদদুনইয়া ওয়া ফিল আখিরাতে লা তাবদিলা লিকালিমাতিল্লাহি জালিকা হুয়াল ফাউযুল আজিম।’
অর্থ: ‘তাদের জন্য সুসংবাদ দুনিয়ার জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।’ (সুরা ইউনুস: আয়াত ৬৪)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজরের ওয়াক্তে ওঠে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য সন্ধ্যা আগে আগে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করা। ফজরের সময় জেগে ওঠার একনিষ্ঠ নিয়ত করা। ইসলামিক স্কলারদের পড়া এ আয়াতটি পড়ে ঘুমাতে যাওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়াসহ জেগে ওঠার বিশুদ্ধ নিয়ত ও কোরআনের এ আয়াতের আমল করার তাওফিক দান করুন। ফজরের ওয়াক্তে ঘুম থেকে জেগে উঠে জামাতে ফজর নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।