ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, জুলাই ৬, ২০২৪ |

EN

রনির নিঃসঙ্গ লড়াই, চুপ রেল কর্তৃপক্ষ

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: মঙ্গলবার, জুলাই ১৯, ২০২২

রনির নিঃসঙ্গ লড়াই, চুপ রেল কর্তৃপক্ষ

ছবি: সংগৃহীত

হাতে শেকল আর প্ল্যাকার্ড নিয়ে রেলের অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাই লড়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। গত ১১ দিন ধরে ছয় দফা দাবিতে অবস্থান করছেন কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায়। শুরুতে থাকতে দেওয়া হলেও পরে স্টেশনের ভেতর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাকে। বাইরেও নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের হুমকিও। তবে প্রচ- গরম আর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অবিচল রনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

গতকাল সোমবার রনি জানান, গত ১৩ জুন অনলাইনে ঢাকা-রাজশাহীগামী রুটের টিকিট কাটার চেষ্টা করেন। এ সময় তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও কেটে নেওয়া হলেও তাকে টিকিট কনফার্ম করা হয়নি। পরে তিনি রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সহজ ডট কমের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কিন্তু সেদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়। কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

রনি বলেন, ‘৭ জুলাই থেকে আমি কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে অবস্থান শুরু করি। প্রথমে একা আন্দোলনে নামলেও পরবর্তী সময়ে আমার বন্ধুরা এসে আমার সঙ্গে যোগ দেয়। ঈদের দিনেও আমরা স্টেশনেই ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের তৃতীয় দিন ৯ জুলাই পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। আমাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন থেকে গণস্বাক্ষর বন্ধ রেখে শুধু অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বহিরাগত লোকজন এসে আমাকে গালাগাল করেছে। পাগল বলে তারা অশ্রাব্য ভাষায় নানান কথা বলছে। তবে আমি মনে করি আমার সঙ্গে দেশের সব মানুষ একমত। দীর্ঘদিন ধরে রেলের অব্যবস্থাপনা চলছে। এটা শুধু আমার একার লড়াই নয়। জয়ী না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।’

এ সময় রেল কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি জানিয়ে রনি বলেন, ‘এতদিন ধরে আমরা এখানে অবস্থান করছি। অহিংস প্রতিবাদ করছি। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গান, কবিতা, পথনাটক হয়েছে। তবুও রেলের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাই এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি কালকে (মঙ্গলবার) রেল মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ করব। লংমার্চ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

রনির ৬ দফা দাবি: অনলাইনে টিকিট কেনায় হয়রানি বন্ধ করে তদন্ত করতে হবে; হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে; টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে; অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে; ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে; ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে; শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বাড়াতে হবে এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার শুনানির জন্য ডেকেছে ভোক্তা অধিকার: টিকিট না দিয়ে টাকা কেটে নেওয়ায় গত ১৪ ও ১৫ জুন দুবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নিজের অভিযোগ জানান রনি। অবশেষে আগামী বুধবার শুনানির জন্য ডেকেছে অধিদপ্তর। রনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস পার হওয়ার পর ভোক্তা থেকে শুনানির তারিখ দেওয়া হয়েছে। আমি সচেতন বলে ভোক্তায় অভিযোগ করেছি।’

সংহতি জানাতে প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে স্টেশনে: আন্দোলনের পর থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা আসছেন কমলাপুরে। আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিভিন্ন বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আসছেন সংহতি জানাতে। সংহতি জানিয়ে যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, ‘রনি রেলওয়ের সিন্ডিকেট কর্র্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনেক সাহস নিয়ে কথা ও গান গেয়ে মানুষকে জাগতে বলছেন। তবে তাকে হুমকি দিয়ে তার বন্ধুদের শারীরিক আঘাত করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তার পাশে থাকা। কারণ রনি শুধু নিজের জন্য দাঁড়ায়নি, আমাদের সবার জন্য দাঁড়িয়েছে।’

জামালপুরে ৪ শিক্ষার্থীর অবস্থান কর্মসূচি: বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ছয় দফা দাবিতে জামালপুর রেলস্টেশনেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। গতকাল সকাল ৮টা থেকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তারা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। রেলের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রুকনোজ্জামান সীমান্ত, অপরাধ বিজ্ঞান ও পুলিশ তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রুবেল, খিলগাঁও মডেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ভূঁইয়া হৃদয় ও ইসলামপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় বোস। তারা জামালপুর ও শেরপুরের বাসিন্দা।

নোয়াখালীতে অবস্থান কর্মসূচি : গতকাল সকাল ১০টার দিকে নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলওয়ে স্টেশনেও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সচেতন নোয়াখালীবাসীর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে নাগরিক অধিকার আন্দোলন-নোয়াখালী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রয়াল ডিস্ট্রিক্ট নোয়াখালী, নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্সসহ ১৫টি সামাজিক সংগঠন এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়।

সাইবার ওয়ারিয়র্সসহ ১৫টি সামাজিক সংগঠন এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়।