ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

ধেয়ে আসছে অর্থনৈতিক সংকট: বাড়ছে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, জুলাই ৫, ২০২২

ধেয়ে আসছে অর্থনৈতিক সংকট: বাড়ছে আতঙ্ক
আস্তে আস্তে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট দৃশ্যমান হচ্ছে। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে করোনার কারণে বিশ্ব মন্দা। সবকিছুর প্রভাব এখন বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে শুরু করছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট ধেয়ে আসছে এবং সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জনমনে এবং সরকারের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে যে কারণগুলো তৈরি হয়েছে তার মধ্যে একটা বড় কারণ হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার, গ্যাসের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাত এলপিজি নির্ভর এবং সেই এলপিজি স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় করতে হতো। আগে চার থেকে পাঁচ ডলারের মধ্যে এলপিজি গ্যাস পাওয়া যেত, এখন তার দাম বেড়ে হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ ডলার। ফলে সরকার এলপিজি ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক সংকটের প্রথম দৃশ্যমান রূপ আমরা দেখতে শুরু করেছি লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে লোডশেডিং ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন এবং এর বাস্তব কারণও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু লোডশেডিংয়ে বাসাবাড়িতে যতটা না ক্ষতি হচ্ছে, তারচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে শিল্পকারখানাগুলোতে। সেখানে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। করোনায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মুখেও বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছিল বিদায়ী অর্থবছরে, সেখানে ৫ হাজার কোটি ডলার রপ্তানি আয় বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু এখন যদি বিদ্যুৎ সংকট বাড়তে থাকে, তাহলে রপ্তানি আয়ও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে সামনের দিনগুলোতে, এমন আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। শিল্প কারখানার মালিকরাও এই নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যদি বিদ্যুৎবিহীন থাকে, গ্যাস সরবরাহ যদি না হয় তাহলে সামনে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আবার অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস স্পট মার্কেট থেকে কেনা সম্ভব নয়। এরকম পরিস্থিতিতে সামনে আতঙ্ক অপেক্ষা করছে বলেই মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংকটের আরেকটি বড় দিক হলো, প্রবাসী-আয়। গত অর্থবছরে প্রবাসী-আয় কমেছে ১৫ শতাংশ। সামনের দিনগুলোতে প্রবাসী-আয় আরো কমার শঙ্কা রয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের বেতন কমেছে। এরকম পরিস্থিতিতে তারা ঠিকঠাকমতো টাকা পাঠাতে পারছেন না। তবে আশা করা হচ্ছে যে, সামনে ঈদ, ঈদের আগে প্রবাসীরা প্রিয়জনের জন্য টাকা পাঠাবেন এবং এটি অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ সবসময় প্রবাসীরা কিভাবে টাকা পাঠাবেন, এই নির্ভরতাও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। ঈদে পাঠালেও পরবর্তী মাসগুলোতে ধারাবাহিকতা থাকবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন বটে। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর একটা বড় ধরনের চাপ পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে বেকারত্ব বাড়বে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। অন্যদিকে জিনিসপত্রের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করতে পারে। এই ধেয়ে আসা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারি গাড়ি ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ রয়েছে সরকারের, ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়ে এগিয়ে চলছে। কিন্তু সবকিছুই মিলিয়ে ধেয়ে আসা অর্থনৈতিক সংকট সরকার সমাধান করতে পারবে কিনা, এটাই দেখার বিষয়।