ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার কবল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী এক হাজারের বেশি শহর মুক্ত করেছে। তবে এখনো রাশিয়ার দখলে দুই হাজার ৬১০টি শহর রয়ে গেছে, যা মুক্ত করতে হবে। ওয়াশিংটন পোস্ট।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার হাত থেকে যেসব শহর মুক্ত করা হয়েছে, তার অধিকাংশই পুনর্গঠন করতে হবে।
কারণ রুশ বাহিনী এসব শহরে হামলা চালিয়ে সেগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, পুনরুদ্ধার করা শহর, অঞ্চলগুলোতে আমাদের জনগণ স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে যাচ্ছে।
কিন্তু পুরো দেশ এভাবে পুনর্গঠন করা অনেক কঠিন। আমাদের পক্ষে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের সাহায্য করা হয়, তাহলেই শুধু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। কিয়েভ আশা করছে, ইউক্রেন পুনর্গঠনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হবে।
ক্রিমিয়া ও জাপরোঝঝিয়ার মধ্যে বাস চলাচল শুরু : ইউক্রেনে দখলকৃত অঞ্চলের যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা ঢেলে সাজাচ্ছে রাশিয়া। দেশটির পূর্ব উপকূলের শহরগুলোকে বাস ও ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হচ্ছে।
রোববার ক্রিমিয়া থেকে জাপরোঝঝিয়া পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। একই দিন ক্রিমিয়া-খেরসন-জাপরোঝঝিয়া রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তা কয়েকদিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউনাইটেড রাশিয়ার স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে রয়েছেন ক্রেমলিনের দনবাস-বিষয়ক পয়েন্টসম্যান সের্গেই কিরিয়েঙ্কো। ক্রিমিয়ার প্রশাসনিক প্রধান সের্গেই আকসিয়ানভ বলেছেন, ক্রিমিয়া থেকে জাপরোঝঝিয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে।
ক্রিমিয়া-জাপরোঝঝিয়া রেল রুটের ঝানকই-মেলিটোপোল ও ঝানকই-খেরসন অংশে রেলপথের নিরাপত্তা জোরদার কার্যক্রম শেষ হলেই ট্রেন চালু হবে। তিনি বলেন, নতুন ট্রেন চলাচলের সময়সূচি সংক্রান্ত তথ্য অফিসিয়াল চ্যানেলে প্রকাশ করা হবে। যারা এরই মধ্যে জুলাইয়ের ১-৩ তারিখের টিকিট কেটেছেন, তারা ট্রেন চালুর পর ওই টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবেন। অন্যথায় টিকিট জমা দিয়ে অর্থ ফেরত নিতে পারবেন। জানা গেছে, প্রতিদিন কয়েকটি বাস ক্রিমিয়ার সিমফেরোপুল থেকে খেরসন, মেলিটোপোল, জাপরোঝঝিয়া হয়ে বারদিয়ানস্ক পর্যন্ত যাতায়াত করবে। একইভাবে বারদিয়ানস্ক থেকে ক্রিমিয়ার পথে বাস চলবে।
আট বছর আগে রাশিয়া ক্রিমিয়ার দখল নেওয়ার পর এ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী মারাত খুশনুলিন বলেছেন, আসন্ন হেমন্ত ও শীত মৌসুমে সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দনবাস অঞ্চলের পুনর্গঠন কার্যক্রম জোরদার করবে। রাশিয়ার ৬ হাজার ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও নির্মাণকর্মী বর্তমানে ওই অঞ্চলে কাজ করছেন। কিছুদিনের মধ্যে কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে।
রুশ সরকার দনবাসের দখলকৃত এলাকা পুনর্গঠনের সুবিধার্থে সেখানকার শহরগুলোর পৃষ্ঠপোশকতার দায়িত্ব রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানীয় সরকারকে দিয়েছে। এর আওতায় মস্কো আঞ্চলিক সরকার দোনেস্ক ও লুহানস্ক শহরের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছে। একইভাবে সেন্ট পিটার্সবার্গ নিয়েছে ওডেসা ও খেরসনের দায়িত্ব। মারাত খুশনুলিন এদিন দনবাসের বিভিন্ন শহরের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব গ্রহণকারী রুশ অঞ্চলগুলোর গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ সময় তিনি দখলকৃত অঞ্চলে রাশিয়ার গৃহীত উন্নয়ন ও পুনর্গঠন কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, বন্দরনগরী মারিউপোলে আগের তুলনায় বহুগুণ বেশি অবকাঠামো ও আবাসন সুবিধা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মারিউপোল বন্দর এরইমধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। বন্দর এলাকায় বিদ্যুৎ অবকাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বারদিয়ানস্ক বন্দরও কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার স্থানীয় সরকারগুলো ডনবাস অঞ্চলের অবকাঠামো ও পরিষেবা ব্যবস্থা পুনর্বাসনে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় অধিবাসীরা এসব কার্যক্রমের সুবিধা পাচ্ছেন। এদিকে লুহানস্ক শহর দখলের পর এবার দোনেস্ক দখলে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে রাশিয়া।
সেমাবার এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে লুহানস্কের গভর্নর সেরহি হেইদায় বলেন, রুশ বাহিনী এখন দোনেস্কের স্লোভানস্ক এবং বাখমুতে আক্রমণ বাড়াবে। রোববার স্লোভানস্ক শহরের মেয়র ভাদিম লাইখ জানান, রুশ বাহিনীর বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, লিসিচানস্ক দখলের মধ্য দিয়ে পুরো লুহানস্ক অঞ্চল স্বাধীন হয়েছে।
ইউক্রেন বলছে, দোনেস্ক অঞ্চলের অনেক বড় শহর এখনো ইউক্রেনীয় সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। এসব শহরে গত দু-তিন দিন ধরে প্রচণ্ড রকম ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট হামলা হচ্ছে। ইউক্রেন যথেষ্ট পরিমাণে ভারী কামান এবং অন্যান্য অস্ত্র পেতে চলেছে এবং তখন হারানো এসব অঞ্চল মুক্ত করতে সমর্থ হবে।