সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় দাঁড় করিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মারধর, নারী হেনস্থা, সহ নেতাকর্মীদের অপমান এমনকি একই শাখা অন্য এক নেতাকে প্রকাশ্যে জুতাপেটার অভিযোগ ও উঠেছে।
সোমবার (৪ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামরুল হুসাইন ও পরাগ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হাসান হৃদয় এসব অভিযোগ করেন।
জবি ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একক কর্তৃত্ব বিস্তারের লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের সামনে আসার সুযোগ দিতো না। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে ক্যাম্পাসে অন্যান্য নেতাদের টানানো পোস্টার রাতের আধারে ছিঁড়ে ফেলা, প্রোগ্রামে মঞ্চে উঠতে বাঁধা দেয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রটোকল দিতে না দেয়া এমনকি একজন নেতাকে সবার সামনে জুতা পেটাও করেছে। তাছাড়া এসব কর্মকাণ্ড করলে কর্মীদের সেই নেতার না চলার হুমকি ও দেয়া হয়। এছাড়াও ছাত্রী হলের নাম করে মেয়েদের রাজনীতিতে এনে ব্যবহার করা, তাদের নিয়ে মধ্য রাত পর্যন্ত রিসোর্টে থাকার অভিযোগ ও করা হয়েছে। এছাড়াও সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির ছাত্রদলের সংশ্লিষ্টতা ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের বাবা যুবদলের ইউনিয়ন পরিষদের নেতা ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামরুল হুসাইন বলেন, জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের পকেট ভর্তি করতে ছাত্রলীগের নাম করে ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজি করেছে। নতুন ক্যাম্পাসের প্রজেক্ট জামাত নেতার কোম্পানিকে পাইয়ে দিয়ে সেখান থেকে কমিশন খেয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতি হয়ে মেয়ে নিয়ে রিসোর্টে যায়। যেখানে রাত নয়টায় হলের গেইট বন্ধ হয়ে যায় সেখানে কি করে মধ্যে রাতে তারা হলে ঢুকে! সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি। একজন ছাত্রলীগ নেতা হয়ে কি করে আদর্শের সাথে বেঈমানে করে সেটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন।
আরেক সহসভাপতি পরাগ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জেলা ছাত্রকল্যাণ এর নেতার সাথে আমার ঝামেলাও হয়। সেখানে হাতাহাতি ও হয়। কিন্তু আমি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা না নিয়ে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি সম্পাদকের নিষেধ আছে বলে জানায়৷ সভাপতিকে তা অবহিত করলে সেই ছেলে আকতারের রাজনীতি করে তিনি ঘটনাটি এড়িয়ে যান। ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম হলে তারা দুইজন ব্যতীত কাউকে স্টেইজে উঠতে দেয় না। কেন? তিনি যেই স্বাক্ষতে নেতা হয়েছেন আমরাও সেই স্বাক্ষরেই নেতা হয়েছি। তাহলে আমরা কেনো সেই অধিকার পাবো না? জবি ছাত্রলীগের সভাপতি সম্পাদক কোন আদর্শে রাজনীতি করে তা কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে যাচাই-বাছাই করার আহবানও জানান তিনি।
'কুপ্রস্তাব' এর অভিযোগ আনা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী বলেন, ছাত্রীহলে সিট পেতে ছাত্রলীগ থেকে ৩০০ জনের নাম দেয়া হয়েছে। অথচ ক্যাম্পাসে ৭ বছর রাজনীতি করলেও আমার নাম দেয়া হয়নি। কিন্তু এক মাস রাজনীতি করা এক মেয়ে একাই ৬-৭ জনের নাম দিয়েছে। এখানে আমাকে যেমন কুপ্রস্তাব দিয়েছে, মনবাসনা পূরণ করার কথা বলা হয়েছে, তাদের যে বলা হয়নি তার কি প্রমাণ আছে!
তিনি আরও বলেন, মাদারিপুর বাড়ি হওয়ায় একসাথে আকতার ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করেছি। কিন্তু নেতা হওয়ার পর তার আসল রূপ দেখতে পেয়েছি। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। হলে সিট না পেয়ে তাকে বলার উনি উলটো বলেন যে তুমিও তো নেতা তুমি তোমার সিটের ব্যবস্থা করো। তাছাড়া ক্যাম্পাসে তার প্যানেলে থাকতে পারবো না বলে সভাপতির কাছে যাই কিন্তু সেখানেও আমাকে রাজনীতি করতে দেয়া হয়নি।
সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হাসান হৃদয় বলেন, আমি ২০১৫ সাল থেকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করি। চরাঞ্চল থেকে ওঠে এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি, নিজের যোগ্যতায় পদ পেয়েছি, ১৯ সালের সম্মেলনে তার হয়ে দিন রাত কাজ করেছি। ক্যাম্পাসের পাশের এক মার্কেটের মালিকের খুঁজ খবর নেয়ায় আমাকে বলা হয়েছে আমি নাকি চাঁদাবাজি করি। আমি একজন পোস্টেড নেতা হয়েও আমাকে সবার সামনে অপমান করা হয়েছে। আমাকে বহিষ্কারের হুমকি ও দেয়া হয়েছে। রোজার ঈদের এক সপ্তাহ আগে ভিসি ভবনের সামনে আমাকে ইব্রাহিম ফরাজি জুতা খুলে দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরেছে আর যেসব অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখলেই তা বুজতে পারবেন। আমি বলেছিলাম যদি অপরাধ করে থাকি তাহলে আমার বিচার হবে। কিছু না করেও কেনো আমাকে অপমানিত হতে হলো আমি এর বিচার চাই।
এছাড়াও নেতৃবৃন্দ শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির গুটি কয়েকজন ব্যতীত সকলেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্বারা হেনস্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। এছাড়াও অভিযোগ গণমাধ্যমের নিকট তুলে ধরার সময় ১০-১২ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।