রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরা এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা লিটন ওরফে কথিত ডা. লিটন ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রাইভেটকার, পাসপোর্ট, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ল্যাপটপ, ৪৭ পিস ইয়াবা ও ১২ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়।
বিদেশে পাচার করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করতো তারা। টাকা না পেলে করা হতো ভয়াবহ নির্যাতন। এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ নারীকে বিয়ের পর পাচার করেছে কথিত ডাক্তার লিটন।
তাদের হাত থেকে কৌশলে পালিয়ে এসে পাচারের নির্মম কাহিনী র্যাবের কাছে বর্ণনা করেছে দুই নারী। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুর থেকে আটক করা হয় লিটন ও আজাদ নামের দুইজনকে।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন একথা জানান।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, আটক লিটন বিয়ে করে নারীদের পাচার করতো। এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ নারীকে বিয়ের পর পাচারের তথ্য পেয়েছে র্যাব। এছাড়া নার্স, মেডিকেল এসিসট্যান্টসহ নানা কাজের লোভ দেখিয়ে নারীদের পাচার করতো এই দুইজন। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরের ভুয়া কাগজপত্র, সিলমোহর তৈরি করতো তারা নিজেরাই। এই চক্রের হাতে পাচার হওয়া অনেক নারী এখনও ইরাকে তাদের পরিচিত দালালদের হাতে জিম্মি আছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তারা।
র্যাব জানায়, পুরুষদের পাশাপাশি এই চক্রটি নারীদেরও পাচার করে থাকে। বিভিন্ন পেশায় দক্ষ নারী যেমন নার্স, পার্লার ও বিক্রয় কর্মীদের টার্গেট করে এই চক্রটি। চক্রটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের আকৃষ্ট করত। প্রতারণার কৌশল হিসেবে লিটন নিজেকে ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করা এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতেন। বতর্মানে লিটন ইরাকের বাগদাদে একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন বলেও পরিচয় দিতেন।
অপর সহযোগী আজাদ একটি এজেন্সির আড়ালে নারী পাচারের সাথে যুক্ত। এই চক্রটি বিদেশে পাচারের পর নারীদের অনৈতিক কাজের জন্য বিক্রি করে দিতো। নারীদের প্রথমে টুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে নেওয়া হতো। তারপর দুএকদিন অপেক্ষা করিয়ে ভিজিট/টুরিস্ট ভিসায় ইরাকসহ অন্যান্য দেশে পাচার করতো। চক্রটি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।
এ চক্রটি এ পর্যন্ত ২০০-২৫০ জন মানব পাচার করেছে। তার মধ্যে ৩৫-৪০ জন নারী রয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানিয়েছে র্যাব।
লিটন ওরফে কথিত ডা. লিটন সম্পর্কে র্যাব জানায়, তিনি সরকারি একটি সংস্থায় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করতেন। ২০১০ সালে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে চাকরিচ্যুত হন। এরপর ২০১৩ সালে ইরাকে যান তিনি। গড়ে তোলে সংঘবদ্ধ চক্র। লিটন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েও নারীদের পাচার করতেন। তার নামে বিভিন্ন থানায় মানবপাচার ও প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।