২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটবাহিনী। এই যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। সেখানে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক সংকট।
গত ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছিল তহবিলের অভাবে এই সংস্থা ইয়েমেনের ৮০ লাখ দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার মাত্রা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। সংস্থাটি গত মাসে আরও এক দফা খাদ্য সহায়তার মাত্রা কমিয়ে আনার কথা ঘোষণা করে।
এ পরিস্থিতির পেছনে অর্থ সাহায্যের অভাব, বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।
ফলে দেশটিতে এক কোটি ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ এখন অনাহারে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে তাদের এক প্রতিবেদনে। বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালে দেশটির বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এত বেশি সংখ্যক ইয়েমেনি অনাহারের শিকার হয়নি।
জাতিসংঘের মানবীয় তৎপরতা বিষয়ক সমন্বয় সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, ইয়েমেনে ত্রাণ সাহায্যের বাজেট বা তহবিল কমিয়ে দেওয়ার কারণে দেশটির এক লাখ ষাট হাজার ইয়েমেনি চরম খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়েছে। অন্যদিকে ৫০ লাখ ইয়েমেনি তাদের দৈনিক প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম খাদ্য পাবে এখন থেকে এবং ৮০ লাখ ইয়েমেনি তাদের দৈনিক চাহিদার এক তৃতীয়াংশেরও কম খাদ্য পাবে এখন থেকে।
ওসিএইচএ বলছে, জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ইয়েমেনে অপুষ্টির মারাত্মক শিকার ৫০ হাজারেরও বেশি শিশুর চিকিৎসা সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে জুলাই থেকে। একইসঙ্গে জাতিসংঘ ইয়েমেনের মা ও শিশু বিষয়ক স্বাস্থ্য-সেবা কর্মসূচি বন্ধ করে দেবে, ২৫ লাখ ইয়েমেনি শিশু ও এক লাখ ইয়েমেনি মা এ কর্মসূচির আওতায় সেবা পেতেন।
মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বসতি আর আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশ ইয়েমেন। গৃহযুদ্ধে দেশটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহকে তার ডেপুটি আবদারাবুহ মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হয়। ক্ষমতায় এসে নানা সংকটের মুখোমুখি হতে হয় হাদিকে। তারই মধ্যে শক্তিশালী হয়ে ওঠে হুতি বিদ্রোহীরা। এক পর্যায়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন হাদি। এরপর তাকে ক্ষমতায় ফেরাতে সৌদি আরব আর অন্য আটটি সুন্নি দেশ একজোট হয়ে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে।
সূত্র: পার্স টুডে ও বিবিসি