Can't found in the image content. আমলারা জনপ্রতিনিধিদের ‘গলায় রশি বেঁধে ঘোরান’ | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

আমলারা জনপ্রতিনিধিদের ‘গলায় রশি বেঁধে ঘোরান’

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: মঙ্গলবার, জুন ২৮, ২০২২

আমলারা জনপ্রতিনিধিদের ‘গলায় রশি বেঁধে ঘোরান’

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান/ ফাইল ছবি

রাজনীতিবিদদের ওপর আমলাদের ‘খবরদারি’ নিয়ে বেশকয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছে দেশে। রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে সরকারের কাছে আমলারা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন— জাতীয় সংসদে সাম্প্রতিক সময়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য। এবার সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মন্তব্য করেছেন, আমলারা স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের গলায় রশি বেঁধে ঘোরান।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি নিজেও একজন আমলা ছিলেন। অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে গিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হন। 

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যানকে সচিবালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিবের সঙ্গে দেখা করতে হলেও দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। স্থানীয় সরকারের প্রাণভোমরা এখন আমলাদের কাছে। এর ফল কী হবে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

মন্ত্রী বলেন, বরাদ্দ পেতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়, আগে নিজেদের ২০ টাকা আছে দেখাও, তাহলে ১০০ টাকা বরাদ্দ পাবে। এভাবে গলার মধ্যে নানা ধরনের রশি দেওয়া হয়। তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহজ-সরল পথে না গিয়ে ঘোরানো পথে যান। সচিবালয়ের বারান্দায় বা সচিবালয়ের বাইরের স্টোরগুলা যেখানে চা খাওয়া (পান করা) হয়, ওখানে বসে আলোচনা হয়, দেনদরবার হয়। সেখানে তাঁরা (আমলা) কিছু পান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বাজেটের টাকা বরাদ্দ দেন আমলারা। বরাদ্দের ক্ষেত্রে কাউকে পাঁচ কোটি দিয়ে দেয়, কাউকে এক টাকাও দেয় না। কোনো কোনো প্রকল্প রাতারাতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠনো হয়। আবার কোনো প্রকল্প ধরা হয় না। এটার বদল না হলে জনপ্রতিনিধিদের দিনের পর দিন ঘুরতেই হবে।

প্রাণভোমরা আমলাদের কাছে
বর্তমান ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারেরই দুর্বল বর্ধিতাংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তাঁর মতে, স্থানীয় সরকারের প্রাণভোমরা আমলাদের কাছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত এ সভায় ভার্চ্যুয়ালি সভাপতিত্ব করেন গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের চেয়ারপারসন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। প্রবন্ধে বলা হয়, স্থানীয় সরকার খাতে সরকারের বরাদ্দের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তবে দেশের মোট জিডিপির সঙ্গে তুলনা করলে বরাদ্দ গত বছরের চেয়ে দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে।

জনপ্রিয়তা নষ্ট হওয়ার ভয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রাজস্ব বাড়ানোর মতো অনেক সিদ্ধান্ত নেন না বলে সভায় উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবুননেছা।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে করা পরিকল্পনাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা হিসেবেই থেকে যাচ্ছে, বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ শাহান। তাঁর মতে, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আমলাদের সাংঘর্ষিক অবস্থান নয়, সমন্বয় বাড়াতে হবে।

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের ভূমিকাই বেশি বলে মনে করেন ইউএনডিপির ডেমোক্রেটিক গভর্ন্যান্স পোর্টফলিওর প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার সক্ষমতাও নেই জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের। একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছরে সাধারণ প্রশিক্ষণও পান না।

কেন্দ্রীয় সরকারই স্থানীয় সরকারকে দুর্বল রাখতে চায় বলে মনে করেন গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী মহসিন আলী। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকারে খুব কম টাকা ব্যয় হয়। বড় ব্যয় তো করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে দুর্নীতি হয় না? সেখানে জবাবদিহি আছে?’

পরিকল্পনা কমিশনের রাজস্ব ও মুদ্রানীতি অনুবিভাগের উপপ্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে রাজস্ব আদায়ের হার খুবই করুণ। স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠান অতিমাত্রায় কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল।

হাটবাজার, বালুমহাল, জলমহালের মতো সম্পদগুলো ইউনিয়ন পরিষদকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবুর আলী সেখ। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি থেকে কেন্দ্রীয় সরকার আয় করে, সেখান থেকে পরিষদকে ছিটেফোটা দেয়। চোর অপবাদ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসা লাগে। অথচ কত টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়?