পদ্মা পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা নদী। ভারতে যেটি গঙ্গা, সেটির নাম বাংলাদেশ অংশে পদ্মা। এটি গঙ্গার প্রধান ধারা। গঙ্গার উৎপত্তি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে, যা সমুদ্র থেকে প্রায় সাত হাজার মিটার উঁচুতে। উৎপত্তির পর নদীটি ২ হাজার ৫২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
গঙ্গা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দিয়ে। সেখান থেকেই নদীটির নাম হয় পদ্মা। বাংলাদেশে প্রবেশ করে এটি রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী হয়ে পৌঁছায় গোয়ালন্দ-দৌলতদিয়া-আরিচা পর্যন্ত। দৌলতদিয়ায় পদ্মা ও যমুনা মিলিত হয়। নদীবিজ্ঞানীরা যমুনাকে বলেন ব্রহ্মপুত্র। তাঁদের কাছে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত নাম পদ্মা। এরপর পদ্মা-যমুনার মিলিত ধারা চাঁদপুরের কাছে মেঘনার সঙ্গে মিলে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে।
পদ্মা পৃথিবীর সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ নদী হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে বর্ষাকালে এটি কোথায়, কখন ভাঙবে, তার পূর্বানুমান অনেক সময় করা যায় না। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা নাসা এক গবেষণায় জানিয়েছিল, ১৯৬৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬৬ হাজার হেক্টরের (প্রায় ২৫৬ বর্গমাইল বা ৬৬০ বর্গকিলোমিটার) বেশি এলাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে, যা ঢাকা শহরের আয়তনের দিগুণের বেশি।
এ খরস্রোতা পদ্মা পারাপার দেশের মধ্যভাগ ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে বড় বাধা। যানবাহন পারাপারের মাধ্যম ফেরি। মানুষ পারাপারের মাধ্যম লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট অথবা নৌকা। বর্ষায় পদ্মা যখন ভয়ংকর রূপ নেয়, তখন ছোট নৌযানে নদীটি পাড়ি দেওয়া অনেকটা প্রাণ হাতে নেওয়ার মতো। আর ফেরিঘাটে সারা বছর মানুষকে ভুগতে হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে।
বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েকেও সেতু হিসেবে গণ্য করা হয়। সে কারণেই বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তালিকা করা এখন অনেকটা কঠিন। তবে এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়, ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে নির্মিত দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু হতে চলেছে পদ্মা সেতু। ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ ও নেপালের দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে দীর্ঘতম সেতুটি হলো ভারতের আসামের ভূপেন হাজারিকা সেতু। ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর ওপর নির্মিত ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সঙ্গে অরুণাচলকে যুক্ত করেছে।