Can't found in the image content. চা-বিস্কুট খাইয়া মাইনসে থাকতে পারব, গরুর তো সে উপায় নাই | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

গরুর খাবার সব পানির তলে

চা-বিস্কুট খাইয়া মাইনসে থাকতে পারব, গরুর তো সে উপায় নাই

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, জুন ১৯, ২০২২

চা-বিস্কুট খাইয়া মাইনসে থাকতে পারব, গরুর তো সে উপায় নাই
সন্ধ্যা নামছে। অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিকের পরিবেশ। তার মধ্যে অঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। খোলা আকাশের নিচে ছাতা ছাড়া একটুও দাঁড়ানোর উপায় নেই। 

একটি অব্যবহৃত দোকানঘরের বারান্দায় গরুগুলোকে কোনোরকমে গাদাগাদি করে বেঁধে রেখেছেন আবদুর নূর। এই বারান্দারই একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর ডান হাতে সাদা ব্যান্ডেজ। ক্ষুধার্ত একটি গরুর শিঙের গুঁতোয় তাঁর হাত জখম হয়েছে।

নূরের মূল বাড়ি হবিগঞ্জে। তবে থাকেন বিশ্বনাথের পুরান সিরাজপুর গাঙ্গিনারপার এলাকায়। এখন বানভাসি হয়ে পরিবার নিয়ে এসেছেন বিশ্বনাথ সড়কের ইমদপুর এলাকায়।

এখানকার দোকানঘরটির মালিক এ পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন। পাশাপাশি পরিবারের গরুগুলো নিরাপদে রাখতে দিয়েছেন।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে নূরের বাড়িতে বানের পানি ওঠে। এতে তিনি নিরুপায় হয়ে পড়েন। পরে পরিবার ও গরু নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হন তিনি।

নূরের পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১০। তাঁর গরু আছে ১৪টি। বন্যার কারণে মানুষ-প্রাণী—সবাই এখন বিপন্ন। নূর, তাঁর পরিবার, গবাদিপশু—সবাই একই বিপদের মুখোমুখি।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নূর বলেন, ‘এখনো পেটত ভাত দিতাম পারছি না। চা-বিস্কুট খাইছি। মাইনসে তো চা-বিস্কুট খাইয়া কোনোমতে থাকতে পারব; কিন্তু গরুর তো আর থাকার কোনো উপায় নাই।’ 

নূর বলেন, ‘গেছে কাইল (শুক্রবার) সকাল ১০টার সময় হাওরে ঘাস কাটতে গেছি। যাওয়ার সময় বাড়ির নামাত (নিচে) পানি দেখছি। গিয়া তো ঘাস আর কাটতাম পারি না। চউখে (চোখে) ঘাস দেখি না। খালি পানি দেখি। দুপুর ১২টার সময় আইয়া (এসে) দেখি পানি বাড়তেছে। এক ঘণ্টার মধ্যে মেইন ঘরে পানি উঠছে। হইচই করতে করতে সময় গেছে। ঘরে পানি ঢুকছে। পানির শাঁ শাঁ করি সে কী ডাক!’ 

পবিত্র কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গত অগ্রহায়ণ মাসে ১২টি ছোট আকারের ষাঁড় কিনেছিলেন বলে জানান নূর। ষাঁড়ের পেছনে তাঁর বিনিয়োগ সোয়া তিন লাখ টাকা।

অনেক বছর ধরেই গরুর ব্যবসা করেন নূর। কোরবানির ঈদের কথা মাথায় রেখে তিনি ছোট আকারের ষাঁড় কেনেন। ছয় থেকে সাত মাস লালনপালন করে ষাঁড়গুলো বড় করেন। তারপর কোরবানির ঈদের সময় তা বিক্রি করে দেন তিনি।

আগের বছরের দুটি মিলিয়ে এখন নূরের ষাঁড়ের সংখ্যা ১৪। মাসের পর মাস ধরে তিনি ষাঁড়গুলো লালনপালন করছেন। 

ষাঁড়ের জন্য খৈল, ভুসি, চিটা, ধানের কুঁড়া ও লবণ কিনে রেখেছিলেন নূর। কিন্তু বানের পানিতে সব তলিয়ে গেছে।

নূর বলেন, ‘গরুর খাবার সব পানির তলে। কিচ্ছু আনতে পারছি না। অসহায় অবস্থায় পড়ি গেছি। কোনোরকমে গরু বাঁচানোর চেষ্টা করছি। টাকাপয়সাও নাই যে হুট করি খাবার লইয়া আইমু (নিয়ে আসব)।’

বন্যার কারণে এই সমস্যা শুধু নূরের একার নয়; গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে অনেকেই একই বিপদে পড়েছেন। 

অনেকে উঁচু এলাকায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গরু-ছাগল পাঠিয়ে দিয়েছেন। যাঁদের সে রকম সুযোগ নেই, তাঁরা এই প্রাণীগুলো বাড়িতে রেখে কোনোরকমে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

অনেকের হাঁস-মুরগি আবার বানের পানিতে ভেসে গেছে। তবে সেদিকে তাকানোর সুযোগ অনেকের হয়নি। কারণ, নিজেদের নিরাপদ করতে যে যেভাবে পেরেছেন, ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন।

নূর জানান, খাওয়ানোর সময় একটা গরু তাঁকে শিং দিয়ে গুঁতো মেরেছে। এতে তাঁর একটা হাতে জখম হয়। পরে চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। তাঁর হাতে ব্যান্ডেজ করে দেন চিকিৎসক।

অবশ্য গুঁতো মারার জন্য গরুর ওপর নূরের কোনো ক্ষোভ নেই। তিনি বলেন, গরুগুলো ক্ষুধার্ত। তিনি গরুর চাহিদামতো খাবার দিতে পারছেন না। তাই হয়তো গরু এ রকম আচরণ করেছে।

গরু নিয়ে বেশ বিপদে আছেন বলে জানান নূর। তিনি বলেন, তাঁর একটা খড়ের গাদা ছিল। সেটা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকায় খড় পাওয়ার কোনো সুযোগ এখন আর নেই।

নূর বলেন, গরুর জন্য তাঁর খুব চিন্তা হয়। কারণ, গরু বাঁচানো না গেলে তাঁর টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পড়বে। এ দুশ্চিন্তায় এখন তাঁর দিন-রাত কাটে।

সুত্র: প্রথম আলো