বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আত্ম-প্রচারে নিমগ্ন নিশিরাতের বেপরোয়া সরকারের চরম ব্যর্থতা, লুটপাট, উদাসীনতা, অদুরদর্শিতা আর খামখেয়ালীপনার কারণে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এমন মহা দুর্যোগের করাল গ্রাসে যখন মানুষ বিপর্যস্ত বিপন্ন তখন নিশিরাতের মাফিয়া সরকার মহাদুর্নীতির এপিটাফ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব আনন্দে আত্মহারা।
তিনি বলেন, বন্যায় ভাসছে দেশ আর সরকারপ্রধান ভাসছে আনন্দে। প্রতিদিন আনন্দ মিছিল করছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশী নাচগানের লোক নিয়ে এসে কনসার্ট করছে। কি বিভৎসতা! কি অমানবিকতা!
রবিবার (১৯ জুন) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, 'করোনা মোকাবেলায় যেমন এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার একবারেই ব্যর্থ, চরম উদাসীনতা, অবহেলা ও দুর্নীতিতে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল, ঠিক তেমনি এই ভয়াবহ বন্যা নিয়েও সরকারের নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা, মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। প্রতিটি দুর্যোগের সময়ে, জনগণের কষ্টের সময়ে, সরকার ব্যস্ত হয়ে যায় উৎসব নিয়ে আনন্দে। করোনায় যখন মানুষের জীবন-মরণ লড়াই চলছিল তখন জন্ম শত বার্ষিকীর উৎসবে মত্ত ছিল তারা। এখন মৌজ মাস্তি করছে পদ্মা সেতু নিয়ে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সারাদেশে উৎসবের আয়োজন নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী এমপিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসককে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, টানা পাঁচ দিন সারাদেশে আনন্দ উৎসব আমোদ উল্লাস করতে হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে। নাচ গান করতে হবে। আতশবাজি ফুটাতে হবে। বর্ণাঢ্য লেজার শো-এর আয়োজন করতে হবে। সারাদেশে একসঙ্গে বেলুন উড়াতে হবে।
তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারাদেশে একযোগে বিগ স্ক্রীনে দেখাতে হবে। শেখ হাসিনা নিজে সারাদেশের মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন আনন্দ উৎসব করতে। দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন পদ্মার দুই প্রান্তের সমাবেশে লক্ষ লক্ষ লোক জমায়েত ঘটাতে। কয়েক হাজার বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। ৩০০ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে। জনসভাস্থলে ৫০০ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। যারা উৎসবে অংশ নিতে অনিহা দেখাবে তাদেরকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। দুই প্রান্তে থানা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। এসব দেখে জনগণ মনে করে ফেরাউনের শাসনও শেখ হাসিনার শাসনের কাছে হার মানবে।
রিজভী বলেন, 'দেশের সংবাদপত্র এবং সকল মিডিয়াকে সরকার লিখিতভাবে ফরমান জারি করেছে প্রতিদিন পদ্মা সেতু নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। মৌখিকভাবে বলা হয়েছে কেউ নিয়মিত ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ না করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হবে। তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে। কয়েকদিন আগে ভারত থেকে একদল সাংবাদিক ভাড়া করে এনে পদ্মা সেতু দেখানো হয়েছে। তাদেরকে এই সেতু নিয়ে শেখ হাসিনার স্তুতি বন্দনা করে রিপোর্ট লেখার জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে। অথচ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও উত্তরাঞ্চলসহ বন্যা উপদ্রুত এলাকা সমূহে প্রায় কোটি পানি বন্দি মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদকদের জানিয়েছেন, এর মধ্যে সিলেটে ২০০ টন চাল, নগদ ৩০ লাখ টাকা, ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ লাখ মানুষ। বরাদ্ধ ৬০ লাখ টাকার কথা বলা হলেও মূলত: ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার মানে জনপ্রতি দেড় টাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভাস্থলে অস্থায়ী ৫০০ টয়লেট স্থাপন করতে যে খরচ হবে তার দশ ভাগের এক ভাগও বরাদ্ধ পায়নি বন্যার্তরা।
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, 'আমাদের দাবি পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। এই লোক দেখানো ভোজবাজি বন্ধ করুন। আমরা দাবি করছি বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং কোনো বিলম্ব ছাড়া এই অঞ্চলগুলোর জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক। আমরা অবিলম্বে সরকারকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলো গিয়ে দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করে এবং বন্যা যেন না হয় সেটার ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব প্রমুখ।