বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা মোড়লগিরির শেষ ঘোষণা করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক ফোরামে বক্তব্য দেয়ার সময় এ ঘোষণা দেন তিনি। মূলত পশ্চিমা বিশ্বকে আক্রমণ করেই তিনি তার পুরো বক্তব্য চালিয়ে যান।
পুতিন বলেন, এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার দিন শেষ। যখন যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ু যুদ্ধে জয় পেয়েছিল, তখন তারা নিজেদের সমগ্র বিশ্বের ঈশ্বর হিসেবে ঘোষণা করেছিল। অথচ, তাদের নিজেদের স্বার্থ নিশ্চিত ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব ছিল না। তারা তাদের ওই স্বার্থকে পবিত্র হিসেবে উপস্থাপন করে আসছে। এই একমুখী ‘ট্রাফিকের’ কারণে সমগ্র বিশ্বব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।
সিএনএন-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাইবার হামলার কারণে ওই অনুষ্ঠান ৯০ মিনিট দেরিতে শুরু হয়। তবে কারা এই সাইবার হামলা চালিয়েছে তা জানা যায়নি। তবে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইউক্রেনীয় আইটি আর্মি নামের একটি হ্যাকার গ্রুপ এই সম্মেলনে হামলার হুমকি দিয়েছিল।
গত ৪ মাস ধরে প্রকাশ্যে খুব বেশি ভাষণ দেন না পুতিন। এই সম্মেলনে তাই পুতিন কী বলে তার দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। ভাষণ শুরুর পর সময় নষ্ট না করে সরাসরি তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকেন।
পুতিন বলেন, পশ্চিমারা এখনও অতীতের স্বপ্নের মধ্যে বাস করছে। তারা মনে করেন, পুরো বিশ্ব তারা দখল করে নিয়েছে এবং সব দেশই তাদের কলোনি। এই বিশ্বে পশ্চিমা ছাড়া সবাই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের পর পশ্চিমারা দুনিয়ার সকল সমস্যার জন্য রাশিয়াকে দোষ দেয়া শুরু করেছে। বক্তব্যে পুতিন দাবি করেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে খামোখা দোষ দিচ্ছে। তিনি উল্টো বিশ্বের খাদ্য সংকটের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ি করেন।
বক্তব্যে তিনি পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞাকে পাগলাটে এবং বেপরোয়া বলে আখ্যায়িত করেন। তবে এতে রাশিয়ার অর্থনীতি ‘আহত’ হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
পুতিন বলেন, পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য একদমই স্পষ্ট। তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে চায়। এ জন্য তারা বিশ্বের সরবরাহ চেইন ভেঙ্গে দিয়েছে, রাশিয়ার জাতীয় রিজার্ভ আটকে দিয়েছে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আক্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা দিন শেষে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার ব্যবসায়ীরা কাধে কাধ মিলিয়ে সযত্নে, সচেতনভাবে এবং ধাপে ধাপে এই চাপ মোকাবেলা করেছে। আমরা এখন অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক করার পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
ভাষণে পুতিন তার ইউক্রেন অভিযানকে সমর্থন করে দাবি করেন, রাশিয়াকে এ যুদ্ধে ডেকে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের অধিকার প্রতিটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্রেরই আছে। আমরা রাশিয়া এবং ডনবাসের নাগরিকদের রক্ষায় এই অভিযান শুরু করেছি। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কিয়েভ এবং নয়া-নাৎসিরা ডনবাসে গণহত্যা চালিয়েছে। পশ্চিমারা এই নাৎসিদের সুরক্ষা দিয়ে গেছে। এছাড়া ইউক্রেনে থাকা রুশ ভাষাভাষীরা বৈষম্যের শিকার হন বলেও জানান পুতিন। বলেন, ডনবাসে রুশ সেনা এবং রুশপন্থী বিদ্রোহীরা নিজেদের জনগণকে বাঁচাতে লড়ছেন। উল্লেখ্য, রাশিয়া ছাড়া ডনবাসের দুই দেশ লুহানস্ক ও দনেৎস্ক-কে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি।