ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

ভুয়া লীগের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, আগস্ট ৩, ২০২১

ভুয়া লীগের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে

৮৩টি ভুয়া লীগের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে গত রাতে দর্জি মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ভুয়া সংগঠন দর্জি লীগের সভাপতি হিসেবে নিজেকে দাবি করতেন। বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ফটোশপে ছবি লাগিয়ে তিনি নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করতেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, কিছু কিছু ছবি ফটোশপ করলেও এই দর্জি লীগের ২০১৯ সালের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত ভুয়া লীগগুলোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যান এবং বক্তব্য রাখেন। যে ৮৩টি ভুয়া লীগের পরিচয় পাওয়া গেছে সেই ৮৩টি ভুয়া লীগের অন্তত ২০টি সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বা প্রেসক্লাবে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকে এবং এই অনুষ্ঠানে তারা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানান। আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, প্রভাবশালী নেতারা অননুমোদিত এই সমস্ত অনুষ্ঠানের কিভাবে যান এবং তারা কেন এই সমস্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন যে, এই সমস্ত সংগঠনগুলোর পৃষ্ঠপোষক কারা তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এই কারণেই এই ধরনের ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পিছনে যে সমস্ত আওয়ামী লীগের নেতা রয়েছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, যে ৮৩টি ভুয়া সংগঠনের খবর পাওয়া গেছে সেই সংগঠনগুলোর নেতারা তাদের উপদেষ্টামন্ডলী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম ব্যবহার করেন, অনেক এমপি এবং মন্ত্রীদের নাম ব্যবহার করেন উপদেষ্টা হিসেবে। এই উপদেষ্টামণ্ডলীদেরকে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান এবং গত বছর পর্যন্ত দেখা গেছে যে তাদের আমন্ত্রণে এই সমস্ত ব্যক্তিরা গিয়েছে। কিন্তু গত বছর থেকে কড়াকড়ি আরোপ করার পরপরই ভুয়া লীগের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাদের যাওয়া কমে গেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই ধরণের সংগঠনগুলোর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং এই ধরনের সংগঠনগুলো হাতেগোনা চার-পাঁচ জন লোক নিয়ে প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠান করে। সেই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যেকোনো একজন বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে আমন্ত্রণ জানান, তারা বক্তব্য রাখেন। তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে এই সমস্ত ভুয়া সংগঠনগুলো জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে সক্ষম হয় এবং এক ধরনের বৈধতা অর্জন করে। সাধারণ মানুষ মনে করে যে, যেহেতু আওয়ামী লীগের নেতা এসেছে কাজেই এই সংগঠনগুলো বোধহয় যৌক্তিক।

তৃণমূল লীগ নামে একটি সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানে অন্তত দু`জন মন্ত্রী উপস্থিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। ২০০৯ সালে যারা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি এরকম বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা এরকম ভুঁইফোড় ভুয়া সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত হতেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর যখন তারা মন্ত্রী হন তখন এই সমস্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা থেকে তারা বিরত থাকতে শুরু করেন। তখন আবার যারা মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ পড়েন তারা এই সমস্ত ভুয়া সংগঠনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার শুরু করেন। এভাবেই ভুয়া সংগঠনগুলো বিভিন্ন নেতার ওপর পরগাছার মত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে এই সংগঠনগুলোকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই সংগঠনগুলোর আড়ালে আসলে চলে ব্যাপক চাঁদাবাজি। এই ভুয়া সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগের পরিচয় দেয়া কিছু টাউটরা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা এই সংগঠনগুলোর সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সম্পদ আদায় করে। আর এ কারণেই এদেরকে যারা বৈধতা দিয়েছে, পৃষ্ঠপোষকতায় দিয়েছে এখন তাদেরকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।