আর মাত্র ৯ দিন পর প্রমত্তার ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি। মাত্র ৬ মিনিটে পাড়ি বিশাল এ নদী। এর মধ্য দিয়ে নতুন করে লেখা হবে দেশের অবকাঠামোর সাফল্যগাঁথা। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যাতায়তের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির পালে লাগবে হাওয়া।
তবে এই খরস্রোতা পদ্মায় সেতু নির্মাণে কম কাঠ-খোড় পোহাতে হয়নি। কারণ পানি প্রবাহের দিক দিয়ে পৃথিবীতে আমাজন নদীর পরই অবস্থান পদ্মার। আর এই নদীতে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি এখন বাংলাদেশের সাহস, সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আসছে ২৫ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। ২৬ জুন থেকে সেতুতে শুরু হবে যানচলাচল। এই সেতু নির্মাণ যেমন বাংলাদেশের জন্য গর্বের তেমনি গোটা বিশ্বে কয়েকটি রেকর্ড গড়েছে পদ্মা সেতু।
গত ১১ জুন মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে নদীশাসন, ক্রেন ব্যবহার, পাইল ও বিয়ারিংয়ের কয়েকটি বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে।
এদিকে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খরস্রোতা পদ্মার মাটির ১২০-১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর পাইল, যা বিশ্বে রেকর্ড গড়েছে। এর আগে পৃথিবীর অন্য কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে গিয়ে পাইল বসাতে হয়নি।
পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে ১০ হাজার টনের বিয়ারিং। পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত ‘‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’’ এর সক্ষমতা ১০ হাজার টন। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো সক্ষমতা রয়েছে এ সেতুর।
পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত একেকটি বিয়ারিংয়ের ওজন ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। বিশ্বে কোন সেতুতে এমন ওজনের বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছে। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি এসেছিল চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ক্রেনটি বাংলাদেশে ছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর। এজন্য মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম কোনো সেতু তৈরিতে এত দীর্ঘদিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। এই ক্রেনটির দাম দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
পৃথিবীতে এই প্রথম কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল উভয়ই ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিলের ব্যবহার একসঙ্গে দেখা যায়নি। অর্থাৎ সেতুগুলো হয় কংক্রিটে নির্মিত, না হয় স্টিলের।
পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদীতীরের ১৪ কিলোমিটার (১.৬ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২.৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতু প্রকল্প তিন জেলায় বিস্তৃত। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীরপুরের শিবচর।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু বিশ্বে কয়েকটি বিষয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সেটা হলো গভীরতম পাইল হয়েছে পদ্মায়। কারণ পদ্মার মতো এত খরস্রোতা নদী পৃথিবীর বুকে নেই বললেই চলে। ভূমিকম্প মোকাবিলায় যে বিয়ারিং ব্যবহার করেছি এটা বিশ্বে রেকর্ড। সেতুর জন্য ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন আর কোথাও নেই। এত গভীরে আর নদীশাসনও কোথাও হয়নি।