কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় সন্ত্রাসীদের অপকর্মে বাধা দেওয়ায় এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ইমরান রশিদকে হত্যার দায়ে একজনের আমৃত্যু ও দুইজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদেরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (৬ জুন) দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম এ রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- মিরপুর উপজেলার কাটদহর চর গ্রামের জমশের আলীর ছেলে জিয়া।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মিরপুর উপজেলার কাটদহর চর গ্রামের আসান আলীর ছেলে মোস্তফা এবং একই উপজেলার শাকদহর চর গ্রামের ইবাদত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জিয়া ও জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছেন। তবে রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোস্তফা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় এ মামলায় তিনজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন- মিলন, আহসান এবং জসিম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর রাত আটটার দিকে পরিবারের লোকজনের সাথে খাওয়া-দাওয়া শেষে টিভি দেখছিল মিরপুর উপজেলার কাটদহর চর গ্রামের বাদশা মাস্টারের ছেলে ইমরান রশিদ (২৮)। এরপর ইমরান তার প্রতিবেশী চাচাতো ভাই আশরাফুলের বাড়িতে যান এবং রাত ১১টার দিকে চাচাতো ভাইয়ের সাথে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত একটার দিকে আসামিরা দলবেঁধে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইমরানের বাড়িতে যান এবং ইমরানকে খোঁজাখুঁজি করেন। এ সময় তার পরিবারের লোকজন আসামিদেরকে বলেন যে, 'ইমরান তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ঘুমাচ্ছে।'
একথা শুনে আসামিরা দ্রুত ইমরানের চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে যান এবং ইমরানকে নির্মমভাবে মারপিট, গলা ও বুকে গুলি করে হত্যা করে।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা চরমপন্থী দলের সদস্য চাঁদাবাজি অপহরণ খুন সহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। তাদের অপকর্মে বাধা দেওয়ায় এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ইমরানকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় পরের দিন ২২ নভেম্বর নিহত ইমরান রশিদের ছোট ভাই ও মিরপুর উপজেলার কাটদহ চর গ্রামের বাদশা মাস্টারের ছেলে হুমায়ুন রশীদ বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের ২৯ অক্টোবর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আদালত এ মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে ৬ জুন রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। নির্ধারিত ধার্য তারিখে আদালতের বিচারক মামলার আসামিদের শাস্তির আদেশ দেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী বলেন, সন্ত্রাসীদের অপকর্মে বাধা দেওয়ায় এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে ইমরান রশিদকে হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় একজনকে আমৃত্যু ও দুই আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় তিনজন খালাস পেয়েছেন।