ছাত্র সংসদ হলো এমন এক প্রক্রিয়া ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা, ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন, কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখা এবং কলেজের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নে ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ছাত্র সংসদের উদ্দেশ্য।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে কলেজের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
গণতন্ত্রের বিকাশে মুক্তবুদ্ধিচর্চার কোনো বিকল্প নেই। অথচ সিকি শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মুক্তবুদ্ধিচর্চার সূতিকাগার ডাকসু, চাকসু, জাকসু, রাকসু, অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও কলেজগুলোতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, আবাসিক হল ও বিভাগগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। অথচ সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব, আর যোগ্য নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
যোগ্য ও মেধাবী ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বার্থে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি হলেও দীর্ঘ ২০বছর ধরে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি সরকারি বিএম কলেজ বরিশাল সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০৩।
ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি ভরা ছিল একসময় দক্ষিণ বাংলার প্রাচ্যর অক্সফোর্ড খ্যাত রাজনীতির আতুর হিসাবে পরিচিত সরকারি বিএম কলেজ।বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় দুই নাম্বার সিরিয়াল এত বড় ক্যাম্পাস খুবই কম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোর ভিতর।অথচ এই ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নেই কোন প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাবস্থা।ছাত্রসংসদ হলো ছাত্রদের অধিকার বাস্তবায়নের প্লাটফর্ম। অথচ আজ গত ২০ বছর ধরে কলেজে কোন ছাত্রসংসদ নেই।ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় এ কলেজের ২০-২৫ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন নানাভাবে। ভর্তি এবং পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ফি। কিন্তু ছাত্র সংসদ না থাকায় এর প্রতিবাদ করতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে ছাত্র নেতৃত্বের বিকাশও ঘটছে না। সৎ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী গড়তে দেশের প্রত্যেকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য বলে অভিমত দিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।
১৮৮৯ সালে বরিশালে বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ছাত্র সংসদ (বাকসু) গঠিত হয় ১৯৫২-৫৩ সেশনে। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও পরে তা থমকে যায়। সর্বশেষ এ নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালের ১৩ আগস্ট। ষাট থেকে আশির দশক পর্যন্ত বাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন জাতীয় রাজনীতির সর্বোচ্চ আসনে আছেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি ১৯৬৪ সালে বাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা আ স ম ফিরোজ ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৭০ সালে। আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বাকসুর ভিপি ছিলেন ১৯৮১ সালে। ১৯৯২ সালে বাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন বরিশাল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও জিএস হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বলরাম পোদ্দার। ১৯৯৪ সালে জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন বরিশাল নগর যুবদলের বর্তমান সভাপতি আকতারুজ্জামান শামীম।
ছাত্র সংসদ হলো এমন এক প্লাটফর্ম যেখানে মুক্ত চিন্তা ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায়।ছাত্র সংসদ আবার ফিরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের কথা বলার অধিকারসহ মুক্ত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্র উন্মুক্ত হবে। ছাত্র সংসদ ছাড়া কোনো কলেজের মুক্তচিন্তার পরিবেশ থাকে না, কলেজ ক্যাম্পাসও পরিপূর্ণ হয় না।ছাত্র সংসদ এমন এক জায়গা যেখানে নেতা তৈরির কারিগর। আর মনে হয় আর এই কলেজ থেকে জাতীয় নেতা তৈরি হবে না।যারা এই কলেজ রাজনীতি করবে তারাই এখানে শেষ হবে।মেধাবী নেতৃত্ব তৈরি হতো জাতি নেতৃত্ব পেত এই বৃহত্তর ঐতিহাসিক কলেজ থেকে যা জাতীর মেধাবী নেতৃত্বের সংকট কেটে যেত।অতিদ্রুত বাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক কলেজের পরিবেশ স্বাভাবিক হোক এক চাঞ্চল্যে পরিবেশ সৃষ্টি হোক ক্যাম্পাসে প্রাচ্যর অক্সফোর্ডে এক আমেজ হোক।ছাত্রদের কথা ও অধিকার বাস্তবায়নের এক প্লাটফর্ম তৈরি করা হোক।
অবিলম্বে সকল ছাত্রসংগঠনও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উচিত এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করা যেন আবার ফিরে পায় শতাব্দীর এই বিদ্যাপীঠ তার যৌবন। উৎসাহ অনুপ্রেরণা পাক সহস্র জ্ঞান ভোমরাগুলো।