ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক। তৃতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য তিনি জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য শেষ পর্যন্ত হয়তো ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে। হ্যাট্রিক করার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে মুখর দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হ্যাট্রিক করতে মরিয়া হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। সাম্প্রতিক সময়ে আড়মোড়া ভেঙেছেন আওয়ামী লীগের এই ত্যাগী নেতা। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে সোচ্চার দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করছেন। আড়ষ্টতা ভেঙে তিনি এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভায় যোগদান করছেন, আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন বিরোধী দলের সমালোচনায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, এই সবকিছু তিনি করছেন আগামী কাউন্সিল অধিবেশনকে সামনে রেখে। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যদিও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত দিন তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে কাউন্সিল হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আর এই কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নতুন সাধারণ সম্পাদক কে হবে সেটি নির্ধারণ করা। কারণ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই এবং দলের নেতাকর্মীরা নিরঙ্কুশভাবে তাকে সমর্থন করেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনিই থাকতেন, তার কোনো বিকল্প নেই। এই বিবেচনায় দলের সাধারণ কে হবেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে ওবায়দুল কাদের হয়তো তৃতীয় দফায় আর সাধারণ সম্পাদক হবেন না। তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এবং নির্বাচনের আগে দলকে গতিশীল করার জন্য সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ওবায়দুল কাদের যতই কাউন্সিল এগিয়ে আসছে ততই নিজেকে সক্রিয় করছেন। অনেকে মনে করছেন যে, নির্বাচনের মাত্র দেড় বছর আগে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন না আনার পক্ষে একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। তারা মনে করছে যে, এই মুহূর্তে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন ভুল বার্তা দিতে পারে। আর এ কারণেই হয়তো ওবায়দুল কাদের আশার আলো দেখছেন। তাছাড়া ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প কে হবে এ নিয়েও দলের ভেতর নানারকম মেরুকরণ রয়েছে। এই সমস্ত মেরুকরণ দলের মধ্যে অনৈক্য এবং বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে বলেও কারো কারো ধারণা। এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই শেষপর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরকে রাখার পক্ষে একটি মহল সক্রিয় হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, এখন যে পরিস্থিতি তাতে তৃণমূল বিভক্ত, সংগঠনের মধ্যে নানারকম সমস্যা রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক পদে এমন একজনকে দরকার যিনি সার্বক্ষণিক ভাবে দলের জন্য কাজ করতে পারবেন এবং নেতাকর্মীদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে পারবেন। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই হয়তো শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এখন পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই আছেন ওবায়দুল কাদের।