ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আবারও আরপিও আইন করার সিদ্ধান্ত ইসির

ঋণ ও বিল খেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার বিধান সংশোধনের চিন্তা, আগের ইসির প্রস্তাব সম্প্রতি ফেরত পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় , স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা বা ওয়ার্কশপ করার পরিকল্পনা


ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: মঙ্গলবার, মে ১৭, ২০২২

আবারও আরপিও আইন করার সিদ্ধান্ত ইসির
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ আইন হিসাবে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এ আইনটি তৈরি করা হচ্ছে বাংলা ভাষায়। ইতোমধ্যে খসড়া তৈরি করেছে কমিশন। ওই খসড়া পর্যালোচনা করছে ইসির আইন সংস্কার কমিটি। খসড়া আরপিওতে বড় ধরনের সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়নি। তবে ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ সংক্রান্ত ধারাগুলোতে সংশোধনী আনার প্রয়োজন আছে কিনা-তা খতিয়ে দেখতে শিগগিরই একটি সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। এছাড়া বিদ্যমান আরপিওর বেশ কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হচ্ছে খসড়া আইনে। এ খসড়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা বা ওয়ার্কশপ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন বিদায়ের আগে ২০২১ সালে আরপিওতে সাত সংশোধনীসহ একটি প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। সেখানেও এটি আইন আকারে পাঠানো হয়। বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ৭ মার্চ ওই সংশোধনীর প্রস্তাব ইসিতে ফেরত পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরপিও সংশোধনে হাত দেয় বর্তমান কমিশন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ও ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, নির্বাচন কমিশন আন্তরিকভাবে চায় আরপিও আদেশ থেকে আইনে রূপান্তর হোক। সবার পড়ার সুবিধার্থে এটি বাংলা ভাষায় প্রণীত একটি আইন হোক। এসব কারণে বাংলা ভাষায় খসড়া তৈরি করা হয়েছে। মূল আইনের সঙ্গে ওই খসড়া মিলিয়ে পড়া হচ্ছে। শিগগিরই আইন সংস্কার কমিটির সভায় এটি চূড়ান্ত করা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আরপিও অনেকবার সংশোধন হয়েছে। এতই সংশোধন হয়েছে যে এখন পড়তে গেলে কষ্ট হয়। একটি ধারার সঙ্গে আরেকটি ধারা মিলিয়ে পড়তে হয়। এছাড়া আগের কমিশন অধ্যাদেশের হুবহু বাংলা ভাষায় রূপান্তর করেছে। কিন্তু সেটি আইন হয়নি। ভিন্ন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আইন হিসাবে রূপান্তরের আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করব। তাদের মতামত নেব। এমনকি ওয়ার্কশপেরও আয়োজন হতে পারে।

সূত্রমতে, এর আগে ২০২০ সালে তৎকালীন কমিশন আরপিও আদেশ থেকে আইনে রূপান্তর করতে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। তখনও ওই প্রস্তাব ফেরত পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। ওই সময়ে ইসিকে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তদসংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি সম্পাদনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চতুর্থ তফশিলের তৃতীয় অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) প্রণয়ন ও জারি করেন। আরপিও একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল। জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত মৌলিক ও পদ্ধতিগত বিষয় সংবলিত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন। এ আইনের অধীনে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবুও এটিকে আইনে রূপ দেওয়া হয়নি। পরে ওই কমিশন আরপিও বাংলাভাষায় হুবহু অনুবাদ করেছিল। বিদায়ের আগের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে ঘটা করে বাংলা ভাষায় অনুবাদের বই উদ্বোধনও করা হয়।

সূত্র আরও জানায়, ৭ মার্চ আরপিও সংশোধনীর যে প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত এসেছে সেখানে বর্তমান কমিশনকে ওই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়। পরে বিদ্যমান আরপিও ও ফেরত আসা প্রস্তাব নিয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের কার্যালয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনাররা। ওইসব বৈঠকে সিইসি নিজেই বেশ কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেন। এছাড়া আরপিওতে বেশ কিছু সংশোধনী আনা যায় কিনা-তা নিয়েও মতামত দেন নির্বাচন কমিশনাররা। পরে ওইসব মতামত ইসির আইন সংস্কার কমিটিতে পাঠানো হয়।

বর্তমানে ইংরেজি ও বাংলা-এই দুই ভাষায় আরপিও মিলিয়ে নিচ্ছেন আইন সংস্কার কমিটির সদস্যরা। তারা বেশ কিছু স্থানে ছোট ছোট ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন। এসব ত্রুটির বেশিরভাগই দাপ্তরিক। এছাড়া ঋণ ও বিল খেলাপিদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বর্তমান যে বিধান রয়েছে, সেখানে সংশোধনী আনার প্রয়োজন আছে কিনা-তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। বিদ্যমান আরপিওর ১২(১)(ড) উপধারায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন খেলাপি ঋণ পরিশোধ করলেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কেএম নূরুল হুদা কমিশন তাদের প্রস্তাবে বিল ও ক্ষুদ্র ঋণ খেলাপিদের একই ধরনের সুযোগ দিতে আরপিওর ১২(১)(ঠ) ও ১২(১)(ঢ) উপধারা সংশোধনের প্রস্তাব করেছিল। সেখানে মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ ও টেলিফোন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সরকারি সেবার খেলাপি বিল পরিশোধের যে বিধান ছিল তা শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়। বর্তমান কমিশন এসব ধারা পর্যালোচনা করছে। আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এসব উপধারা কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাসেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এছাড়া রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ প্রতিটি স্তরে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্য রাখার সময়সীমা ১০ বছর বাড়িয়ে ২০৩০ সাল নির্ধারণ করা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও ৮০ বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিকদের ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবও খতিয়ে দেখছে।