সিলেটের সাবেক কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিককে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঢাকার নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন বাতিল করে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ মো. ইকবাল হোসেনকে সতর্ক এবং মামলাটি ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এ স্থানান্তর করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী বছরের (২০২২ সাল) ২৮ ফেব্র“য়ারির মধ্যে মামলাটির বিচার সম্পন্ন করতে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪কে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহকারে এসব নির্দেশ দেন। আদালত আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিম্ন আদালতে পার্থ বণিককে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। পার্থ বণিকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির বিপ্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেন, জামিনসংক্রান্ত নথি ও বিচারকের ব্যাখ্যা পর্যালোচনা করে আমাদের কাছে মনে হয়েছে- প্রকাশ্য আদালতে এ জামিন আদেশ দেওয়া হয়নি। নিম্ন আদালতকে যে কোনো আদেশ প্রকাশ্য আদালতে দিতে হবে। কোনো কারণে পরে আদেশ দেওয়া হবে বলা হলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আদেশের দিন নির্ধারণ করতে হবে।
এর আগে হাইকোর্টে দুবার পার্থ বণিকের আবেদন খারিজ হয়। ওই সময়ে হাইকোর্ট পৃথক আদেশে প্রথমে ছয় মাসের মধ্যে ও পরে এক বছরের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের পরও নির্ধারিত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় ১৭ জুন পার্থ বণিককে ১৫ জুলাই পর্যন্ত জামিন দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত। পরদিন শুক্রবার কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে তার জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। এ আবেদনের ওপর ২৮ জুন হাইকোর্টে শুনানি হয়। আদালত দুদকের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং বিশেষ জজ আদালতের বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চান। এরই মধ্যে বিচারক ব্যাখ্যা দাখিল করেছেন। ব্যাখ্যায় পার্থ বণিককে জামিন দেওয়ার ঘটনায় ভুল স্বীকার করে হাইকোর্টের কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চান ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন। এ অবস্থায় শুনানি শেষে রায় দিলেন হাইকোর্ট। রাজধানীর ভূতের গলির বাসা থেকে নগদ ৮০ লাখ টাকাসহ পার্থ বণিককে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। ওই টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে গত বছর ২৪ আগস্ট অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটিতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
পার্থের বিরুদ্ধে আরও দুজনের সাক্ষ্য : ঘুষের ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে আদালতে আরও দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেনের আদালতে তারা সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন- দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ও এসআই মনিরুজ্জামান মুক্তি। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ নভেম্বর পার্থের বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু হয়। গত বছরের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপরিচালক সালাহউদ্দিন আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই পার্থ বণিকের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে তার বিরুদ্ধে ওই দিনই দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাটি করা হয়। মামলা ও গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। বর্তমানে তিনি অন্তর্র্বতীকালীন জামিনে রয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত তার জামিন বাতিল করে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন।