কেউ সেজেছেন কালী, কেউ দুর্গা, কেউ বা শিব, আবার কেউ বা রাধা-কৃষ্ণ। এমনি বিভিন্ন দেবদেবীর রূপে বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে পূঁজো অর্থ সংগ্রহসহ ভক্তদের প্ূঁজার আমন্ত্রণ জানান দিচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর ৮ থেকে ১২ জনের একটি দল।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় এমনি দৃশ্য চোখে পড়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরবাজারসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে। হঠাৎ তাদেরকে এমন রূপে দেখে সড়কে ভিড় জমে উৎসুক বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বর্ণিল সাজে নানা দেবদেবীর রূপে ১০-১২ জনের একটি দল বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দলের বেশির ভাগ সদস্য কিশোর, তরুণ ও যুবক। তারা বাড়ী বাড়ী ও দোকানে গিয়ে মঙ্গল কামনা করে ধর্মীয় এবং নৃত্য পরিবেশন করছেন। গান পরিবেশনের পর ওইসব সনাতনী গৃহস্থ ও দোকানীরা তাদের চাল, ধান, ডাল, সবজিসহ নগদ অর্থ দান করছেন তাদেরকে।
দেবদেবীর রূপ ধারণকারী তারা সকলে উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও আলাদীপুর চরক কালী মন্দির কমিটির সদস্য-সদস্যা।
সনাতন ধর্মলম্বিদের সুত্রে জানা গেছে,শ্মশান পিতা ভোলানাথ (শিব) ও কালীমাতা আদ্য শক্তি কৈলাশ থেকে শ্মশান মত্যধামে আগমন উপলক্ষে আলাদীপুরে এই চরক কালী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ৪ বৈশাখ গতকাল সোমবার রাত্রী ১২.৩০ মিনিটে হবে শ্মশান যাত্রা, এ উপলক্ষে ৫ বৈশাখ মঙ্গলবার রাত্রী ২.৪৭ মিনিটে কালী পূঁজো এবং ৬ বৈশাখ বুধবার চরক পূজো ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
আলাদীপুর চরক কালী মন্দিরের সভাপতি পরিতোষ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক কান্তি চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতিবছর বৈশাখ মাসে এই চরক পূঁজো ও মেলার আয়েজন করা হয়। এটি প্রাচীন পূঁজা। করোনার কারণে গত দুই বছর পূঁজা বন্ধ ছিল। এবার আবার পূঁজা হবে, চরক ঘুরবে এবং মন্দিরের আশপাশে মেলা বসবে। সেখানে একজনের পিঠে গাঁথা হবে তৈরীকরা একধরনের বর্শির কল। এরপর ঘোরানো হবে চরকে। সেই সঙ্গে হবে পূঁজা-অর্চনা। এটি দেখতে বিভিন্নস্থান থেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড় জমে। সেই পূঁজোকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন দেবদেবীর রূপে সেজে আমরা অর্থ সংগ্রহসহ মানুষকে পূঁজো সম্পর্কে জানান ও নিমন্ত্রণ দিচ্ছি।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী উজ্জল মহন্ত ও বাপ্পি দাস বলেন, হঠাৎ করেই বাদ্যের তালে তালে নেচে গেয়ে বেড়াতে দেখা যায় বিভিন্ন দেবদেবীর রুপে সাজা একটি দলকে। তারা ঐতিহ্যবাহী চরক পূঁজো উপলক্ষে সকলকে জানান দিচ্ছেন। একই সাথে পূঁজোর খরচ যোগাতে সনাতনীদের কাছে অর্থ সংগ্রহ করছেন। তাদেরকে দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় জমাচ্ছেন।