ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

খুনি মোশতাকের প্রতি ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, এপ্রিল ১৮, ২০২২

খুনি মোশতাকের প্রতি ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির শ্রদ্ধা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ। ফলে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

রবিবার (১৭ এ‌প্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ শ্রদ্ধা জানান। মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

জানা যায়, মুজিবনগর দিবসের এই আলোচনা সভায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের অন্য মন্ত্রীদের পাশাপাশি তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুনি মোশতাকের অবদা‌নের কথা উ‌ল্লেখ ক‌রে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ।

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ‘খুনি মোশতাকের প্রতি ড. রহম‌তের শ্রদ্ধা নিবেদন’-এর তীব্র প্র‌তিবাদ ক‌রেন এবং আলোচনা সভার সভাপ‌তি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান‌কে ড. রহমত উল্লাহর বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দা‌বি জানান। তি‌নি (ড. মুহাম্মদ সামাদ) ব‌লেন যে, খন্দকার মোশতাক মু‌ক্তিযু‌দ্ধের পু‌রো সময় বাংলা‌দে‌শের স্বাধীনতার বিরু‌দ্ধে চক্রা‌ন্তে লিপ্ত ছি‌লেন এবং পা‌কিস্তা‌নের স‌ঙ্গে কন‌ফেডা‌রেশন করার ষড়যন্ত্র ক‌রে‌ছি‌লেন। মু‌ক্তিযুদ্ধ চলাকা‌লে তা‌কে চো‌খে চো‌খে রাখ‌তে হ‌য়ে‌ছে। তাই, শিক্ষক স‌মি‌তির সভাপ‌তির বক্তব্য ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ কর‌বে না এবং ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যালয় প‌রিবার এটা গ্রহণ ক‌রে না। পরে উপাচার্য তার বক্তব্য প্রদা‌নের সময় এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ বলেন, যারা এ অভিযোগ করতেছে তারা কিন্তু ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে এসব করতেছে। আমি কিন্তু আলোচনায় এমন কিছু বলিনি। শুধু মুজিবনগর সরকারে থাকা সবার নাম বলেছি মাত্র।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে তো আমার কোনো আত্মীয়তা নাই। তাহলে আমি কেন তাকে শ্রদ্ধা জানাতে যাবো? মোশতাক ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। কাজেই তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি কেন ইতিহাসের উপর দুঃসাহসিকতা দেখাবো?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপাচার্য স্যার বলেছেন, এরকম কিছু আমি বলে থাকলে তা এক্সপাঞ্জ করা হলো। তবে আমি এটা বলতে পারি, আমি সেই রকম কিছু বলিনি। তারপরেও অজান্তে কিছু হলে দুঃখ প্রকাশ করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ও ধিক্কারজনক ঘটনা। একইসাথে অমার্জনীয় ঘটনা, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এর যথাযথ একটা বিহিত হওয়া দরকার। যাতে ভবিষ্যতে কেউ যাতে এ ধরণের কথা-বার্তা ও আচরণ করতে সাহস না পায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এই বিষয়ে  বলেন, হ্যাঁ, এই ঘটনা সত্য। সেখানে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। ভিসি স্যার ও প্রো ভিসি স্যারও উপস্থিত ছিলেন। এই বিষয়টি উনি (অভিযুক্ত শিক্ষক) বলতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে তো আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশংসা করতে পারিনা।

তিনি বলেন, উনার পরের বক্তাই আমি ছিলাম। এরপর সামাদ স্যার ছিলেন। সামাদ স্যার সেখানে স্পষ্ট বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল কারিগর খন্দকার মোশতাক। তার কিভাবে প্রশংসা হয়! এটি হতেই পারে না।

বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, তুমি যা শুনেছো, তা সত্য।