ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

তিতুমীর ক্যাম্পাসে খোশ আমেজে ইফতার আয়োজন

সিয়াম মাহমুদ, বিশেষ প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, এপ্রিল ১৫, ২০২২

তিতুমীর ক্যাম্পাসে খোশ আমেজে ইফতার আয়োজন
বছর ঘুরে মুমিনের দুয়ারে হাজির পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক। রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে গত (০২ এপ্রিল) পশ্চিম আকাশে উদিত হয়েছে ১৪৪৩ হিজরির রমজান মাসের চাঁদ। চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকেই পবিত্র ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিশ্বের মুসলমানরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য রোজা পালন করছেন। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার এবং সেহরি পালন, রোজার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এই অবিচ্ছেদ্য অংশগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সময়। কারণ, এই সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একসাথে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসে খোশ আমেজে ইফতার করে থাকে। প্রতিবছর পবিত্র মাহে রমজান মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসেও এমন ভিন্নরকম ইফতার আমেজের পরিবেশ বহমান থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এই রেওয়াজ চলমান থাকে। পড়াশোনার জন্য পরিবার থেকে দূরে থাকলেও মনে হতো বন্ধুরা মিলে আমরা একটা পরিবার। প্রত্যেকের পারিবারিক ইফতার আয়োজন থেকে কিছুটা ভিন্ন হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ইফতার। তবে, ক্যাম্পাসে ইফতার আয়োজনও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আরও একটি নতুন পরিবারের সাথে ইফতার করার মতো আনন্দের। 

রমজানে ইফতারকে কেন্দ্র করে সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। প্রায় প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠতে ইফতারির সময় ক্যাম্পাসে ভিড় করছে তিতুমীরিয়ানরা। বেলা দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে ক্যাম্পাস মাঠে ইফতারের প্রস্তুতি। প্রত্যেকে নিজেদের পছন্দ মতো বন্ধু-সহপাঠীদের নিয়ে পছন্দের জায়গায় ইফতার আয়োজনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

ক্যাম্পাসের রমজান একদম অন্যরকম। গত এক সপ্তাহ যাবৎ সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসের মাঠ, শাকিল চত্বর, বেলায়েত চত্বর, ছাত্রলীগ চত্বর, শেখ রাসেল পুষ্পকাননের পাশে ও বিভিন্ন রুম এবং শহীদ বরকত অডিটেরিয়াম সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গিয়েছে, সরকারি তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন বিভাগ, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, জেলা ও আঞ্চলিক ছাত্র সংগঠনগুলো ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ফ্রেন্ড সার্কেল এবং ক্যাম্পাসের ব্যাচভিত্তিক বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে ইফতারের আড্ডা জমাতে দেখা গিয়েছে। কখনো কখনো দেখা যায় ইফতারের আনন্দ ভাগ করে নিতে শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পৃক্ত হতে চলে আসেন কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকগণ। 

ইফতার আয়োজনে থাকে খেঁজুর, বিভিন্ন ধরনের ভাঁজা (যেমনঃ ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি) জিলাপি, তরমুজ, আনারস সহ নানা রকমের কোমল পানীয়। এ ছাড়াও লেবুর শরবত, বেলের শরবত ও অন্যান্য ঠান্ডা পানীয় শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। তবে কেউ কেউ ঝামেলা এড়াতে বিরিয়ানি কিংবা তেহারির ব্যবস্থা করে থাকেন, সাথে থাকে সামান্য ফল এবং পানীয়।

ক্যাম্পাসে ইফতার পোগ্রাম সম্পর্কে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান(২০১৯-২০২০) বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ফয়সাল হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির দিন অন্য রকম একটি দিন ছিল, ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ডিপার্টমেন্টের সহপাঠীরা বিভিন্ন জেলার, তাদের সাথে একসাথে ইফতার করা অন্য রকম আনন্দ পেয়েছিলাম। তাছাড়া একসাথে ইফতারের মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হয়েছে।

যেদিন ডিপার্টমেন্টের সহপাঠীরা একসাথে মাঠে বসে ইফতার করেছি, তা একটা স্মৃতিময় দিন ছিল। আমরা একসাথে আনন্দ করেছি। আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড ম্যাম ও সহযোগী অধ্যাপক কামাল হায়দার স্যার আমাদের ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আমাদের ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ আমাদের ইফতার মাহফিলের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন এবং কলেজ প্রিন্সিপাল অধ্যাপক তালাত সুলতানা ম্যাম আমাদেরকে ইফতার মাহফিল পরিদর্শন করে শুভ কামনা জানিয়েছেন। ডিপার্টমেন্টের প্রভাষক আলনূর স্যার আমাদেরকে বলছেন, এভাবে ইফতার মাহফিলের মতো সকল বন্ধুরা সম্পর্ক মজবুত রাখবা।

ইফতার কার্যক্রম সম্পন্ন হতেই সকলে দল বেঁধে ক্যাম্পাস মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য চলে যান। অতঃপর নামাজ সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসের সন্ধ্যার শীতল হাওয়া উপভোগ করে কিছুক্ষণ সময় কাঁটায়।

এই ইফতার কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে যেমন প্রাণের সঞ্চার হয়, ঠিক তেমনিভাবে বন্ধুত্বের বন্ধনও আরও দৃঢ় এবং মজবুত হয়। যারা পরিবার থেকে দূরে ঢাকায় থাকে, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করতে না পারার দুঃখ অনেকটাই ঘুচে যায় বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করে। গত দুবছর করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো ছিলো স্থবির অবস্থায়। দীর্ঘ দুই বছর পর এমন স্বাদ নিতে পেরেছে শিক্ষার্থীরা।