গত সোমবার নিজ ঘর থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী অন্তু রায়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তু আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তার এ আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে এখনও কেউ কিছুই বলতে পারছেন না। পরিবারও কিছু জানে না।
অন্তুর বাবা দেবব্রত রায় বলেন, তার মৃত্যুর কারণ জানা নেই। আমার আর্থিক সঙ্কট আছে ঠিক। কিন্তু তার পড়াশুনার জন্য কখনও অর্থ সমস্যা হয়নি।
তিনি বলেন, তিনি একজন রাজমিস্ত্রি সহকারী। তার স্ত্রী কৃষিকাজ করেন এবং মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী।
ঘটনার দিনের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, অন্তু ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাড়ি এসে জানায় সে চার্জার ফেলে গেছে। কিন্তু বাড়িতে খুঁজে তার চার্জার পাওয়া যায়নি। রাতে অন্তু ও তার মাসহ তিনি খাবার খান। এরপর অন্তু ঘুমানোর জন্য তার প্রতিবেশী দাদার কাছে যায়। সেখান থেকে ৪ এপ্রিল সকালে অন্তুকে তিনি ডেকে আনেন। তারপর তার মা কথা বলে কাজে যান। তিনিও কাজে যান। ১০টার দিকে ছোট মেয়ে কলেজে যায়। অন্তু বাড়িতে একা ছিল। দুপুরে ছোট মেয়ে কলেজ থেকে ফিরে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এরপর তিনি বা অন্তুর মা কেউই লাশ দেখেননি। ময়নাতদন্ত শেষে একদিন পর লাশ বাড়ি আনলে তারা লাশ দেখেন।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ড. এম এ রশীদ হলের প্রভোস্ট ড. সজল কুমার অধিকারী বলেন, হলে অন্তুর বকেয়া ছিল ছয় হাজারের কিছু বেশি টাকা। এ টাকা বকেয়া থাকার পরও তার ডাইনিং কার্ড অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। ওই বকেয়ার জন্য কোনও চাপ দেয়া হয়নি। আর ১৮ হাজার টাকা বকেয়ার বিষয়টি গুজব ছড়ানো হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বুধবার দুপুরে অন্তুর ডুমুরিয়ার বাড়িতে যান এবং অন্তুর মা-বাবাসহ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অন্তু ঠিকমতো কুয়েটের টিউশন ফি দিতে পারতো না। কিন্তু কুয়েটে কৈফিয়ত দিতে হতো। সে এ জন্য একটা পরীক্ষায় অংশও নিতে পারেনি। কিন্তু তার টিউশন ফি মওকুফ করা হয়নি।
তিনি বলেন, মেধাবী ছাত্রের দায়িত্ব নেয়া উচিত ছিল। অর্থ সঙ্কটের কারণে ছোট বোনকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করাতে পারেনি। ছোট্ট একটু ঘরে চার জন শোয়ার মতো জায়গা নেই। সেই ঘরের এক কোণে থাকা ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে অন্তু আত্মহত্যা করে। সবকিছু মিলিয়ে ধারণা করা যায়, মনোকষ্টে মেধাবী ছাত্র অন্তু আত্মাহুতি দিয়েছে।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আবদুল হাকিম জানান, অন্তুর পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা তাদের জানা ছিল না। আর আর্থিক সঙ্কটের কারণে কুয়েটে কারও পরীক্ষা বন্ধ করার নজির নেই। সময়মতো রেজিস্ট্রেশন করলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারে। অন্তুর কোনও পরীক্ষায় অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি ফাইল না দেখে বলতে পারবেন না। তবে এ ধরনের সমস্যা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান জানান, তিনি খবর পেয়ে অন্তুর লাশ হাসপাতালে গিয়ে দেখেন। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা সম্ভব হবে।
গত ৪ এপ্রিল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে অন্তুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।