ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪ |

EN

'শেখ হাসিনা' কেনো প্রয়োজন আমাদের?

কলাম ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, নভেম্বর ৩, ২০২৩

'শেখ হাসিনা' কেনো প্রয়োজন আমাদের?
১৫ আগস্ট জাতির পিতার স্ব-পরিবার হত্যা পর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বাহিরে থাকার সুবাদে বেঁচে যায়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮৫ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে আসেন। তখন তিনি ব্যক্তিগতভাবে ফিরে এলেও তার সঙ্গে ফিরে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জয় বাংলার ধ্বনি। সেদিন তিনি বিমানবন্দরে অবতরণ করে যখন বিশাল জনসমুদ্রের সামনে আসলেন তখন ঢাকা শহর জয় বাংলা আর জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত হচ্ছিলো। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে ৮১-এর ১৭ মে পর্যন্ত জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলার মতো মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করার মতো মানুষ বাংলাদেশে ছিলো না। সামরিক শাসন, স্বৈরশাসন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের শাসনের ফলে সবকিছু তারা বিকৃত করে উপস্থাপন করেছিলো। সেদিন বৃষ্টিস্নাত ঢাকা শহরে অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এসেছি আওয়ামী লীগের সভাপতিত্ব গ্রহণ করার জন্য নয়, বরঞ্চ আপনাদেরকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।

সামরিক শাসন, স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করার জন্য এসেছি।’ এবং আমরা পরবর্তী সময়ে লক্ষ্য করছি ৮১-এর পর থেকে একটি দীর্ঘসময় তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিত্ব করেছেন। সরকারের প্রধান নানা পরিচয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তার লক্ষ্য ছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করা। তিনি দেশের উন্নয়ন করেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করেছেন। যাদের বিচার না হলে বাংলাদেশ বিজয়হীনতার অপসংস্কৃতিতে স্থায়ীভাবে নিমজ্জিত হতে যাচ্ছিলো সেই জায়গা থেকে তিনি বাংলাদেশকে মুক্ত করেছেন। 

১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতা আসেন শেখ হাসিনা। যাত্রা শুরু মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রকল্প শুরু। জাতীয় সংসদের এক বিশেষ অধিবেশনের সমাপনী দিবসের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্চারণ করলেন এমন কিছু সত্য, যা অনেককেই বিস্মিত করেছে।
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনার শাসনামলে ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের হয়। ওই বছরই ১২ নভেম্বর সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করা হলে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের পথ সুগম হয়। গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার জন্য ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার সঙ্গে আলোচনাক্রমে ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যমুনা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করে শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে এ সেতু উদ্বোধন করেন। পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করে পদ্মা নদীর মাওয়া-জাজিরা অংশে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং তার প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদকালের শেষ দিকে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়ন হার আগের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। এর পেছনে কাজ করেছে শেখ হাসিনার দক্ষতা, সততা, দেশপ্রেম ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ও সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের চিন্তা ও স্বপ্ন ছিল বাংলার মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান ও তাদের কষ্ট দূর করা। শেখ হাসিনা জাতির পিতার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করছেন। 

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়াও শেখ হাসিনার আরো কয়েকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও কর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের অবসান এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে দীর্ঘকালের বিরোধ নিষ্পত্তি। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ কোস্টাল এরিয়া লাভ করায় সমুদ্রসম্পদ ও জ্বালানি প্রাপ্তির অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এসব কাজে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা, সাহস এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জ্ঞান ও নিষ্ঠার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন একজন দূরদর্শী, দেশপ্রেমিক ও গণমানুষের নেতা—মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে ক্ষমতার লড়াই করেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও শাসন ক্ষমতায় যেতে চান মানুষের জন্য কাজ করার স্বার্থে। তার নিজের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। দেশের মানুষের জন্য কী করা দরকার তা তার নখদর্পণে। লাভজনক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক উপকার ও জনহিতকর প্রকল্প গ্রহণ করে জনসেবা করে যাচ্ছেন। সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে বরাদ্দের মাধ্যমে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, দুস্থ, স্বামী পরিত্যক্তা নারী, চা শ্রমিক, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে ভাতা দিয়ে যাচ্ছেন এবং ভূমিহীন ও আশ্রয়হীনদের বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ বর্তমানে সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান এবং নানা প্রতিকূল পরিবেশেও এর অগ্রযাত্রা সারা বিশ্বে প্রশংসিত ও স্বীকৃত। সাবেক ইউনেস্কো প্রধান ইরিনা বোকোভা বলেন, ‘সাহসী নারী শেখ হাসিনা সারা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন।’ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা।’ এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়ন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন স্মার্ট সরকার, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ। 

বাংলাদেশে এখন নানা ধরনের চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগকে একাই তা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে দল ও সরকারের নেতৃত্বে আছেন একজন শেখ হাসিনা। অনেকেই বলে থাকেন, দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র নেই। যা আছে, তা হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্র। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করে গণতন্ত্রের পথে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশের মানুষ তাঁর শাসন মেনে নিয়েছে। এই সময়ে একজন শেখ হাসিনাকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

লেখক- কে এম নেছার উদ্দিন, শিক্ষার্থী- সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।