ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

নৌকায় জড়িয়ে আছে শাওনের স্বপ্ন

জিহাদ হোসেন রাহাত, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি | আপডেট: রবিবার, জুলাই ৯, ২০২৩

নৌকায় জড়িয়ে আছে শাওনের স্বপ্ন
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পশ্চিমাঞ্চলের মেঘনা তীরের জনপদ মিয়ারহাট। মেঘনার শাখা সরু নদী, খাল-বিলে জমা বর্ষার বাধাহীন জলরাশি আর বছর দশ বয়সী শাওনের স্বপ্ন যেন মিলে মিশে একাকার। মিয়ারহাট এলাকায় সে কাজ করছে নৌ-শ্রমিক হিসেবে।

এলাকার মাতুব্বর ঘোচের এক মাঝির সাথে গত এক বছর থেকে নৌকা চালায় শাওন। দৈনিক প্রায় ২শত টাকা পারিশ্রমিকে ছোট দুই বোন আর বাবা-মায়ের সংসারে আলো জ্বালায় পরিবারের বড় সন্তান ইমরান হোসেন শাওন। বর্ষায় মেঘনার টালমাটাল অবস্থা কিংবা গ্রীষ্মের স্বচ্ছ জলরাশি -কোনো ঋতুতেই থেমে থাকে না শাওনের স্বপ্নযাত্রা। পাঁচ সদস্যের পরিবারে মা গৃহিণী হলেও পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পালন করেন হাঁস-মুরগি।

বাবাও করেন রোজগার। পেশায় তিনি একজন ছোটো জেলে এবং স্বল্প সময়ের মাঝি। বলতে গেলে পরিবারের তৃতীয় উপার্জনক্ষম সদস্য শাওন। শুধু যে আয়-রোজগার করে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে তা কিন্তু নয়। পুরোদমে পড়াশোনায়ও এগিয়ে সে। স্থানীয় একটি মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী এই ইমরান হোসেন শাওন। পড়াশোনায় বাকি সব শিক্ষার্থীদের থেকেও দু'কদম এগিয়ে তার অবস্থান।

শাওনের ভাষ্য মতে, তার সহপাঠীর সংখ্যা ত্রিশ জনের অধিক এবং ক্লাসে সে সবার প্রথম। শাওন দিব্যি একদমে বলতে পারে কবিতা, চেনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও। বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামও পারে বানান করে বলে দিতে। জানে বেশ কয়েকটি ইংরেজি শব্দের অর্থও। ছোট্ট শাওনের সাথে কথা বললে না বুঝার উপায় নেই সে যে, খুব মেধাবী শিক্ষার্থী। ব্যবহারে বিনয়ী এবং মার্জিত ভাষা শোভা বাড়িয়েছে তার দরিদ্র পীড়িত সৌন্দর্যের। আর্থিক স্বচ্ছলতা কম হলেও আচার-আচরণে বিন্দুমাত্র নেই ঘাটতি। 

বড় হয়ে কি হবে সে প্রশ্নে একগাল হেসে সৃষ্টিকর্তার উপরই ছেড়ে দেয় ছোট্ট শাওন। জানায়, আপাতত পড়াশোনা আর নৌকা চালিয়েই বড় হতে চায় সে। তার স্বপ্নের একটি অংশজুড়ে রয়েছে তার ছোটো দুইবোন। তারা দুজন শাওনের কাছাকাছি বয়সের। দুই বোনকে পড়াশোনা করিয়ে ডাক্তার বানাতে এখন থেকেই স্বপ্ন দেখছে শাওন। প্রায় সবমসময় জলাবদ্ধ থাকা মিয়ারহাট বাজারের আশপাশের মানুষদের নিয়েও ভাবে সে। স্থানীয় রাহুল ঘাট এলাকা থেকে সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার- এমন চিন্তাও তার মাথায় ঘুরপাক খায়। ভোরে মক্তবে কুরআন শিক্ষা আর সকাল থেকে মধ্য দুপুর পর্যন্ত মাদরাসায় অবস্থানের পর নৌকায় যাত্রী পারাপারের কাজে ফেরে সে। 

এবারের ঈদুল আজহায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লম্বা ছুটি থাকায় ভ্রমণ পিপাসুদের কাছ থেকে বাড়তি আয় করেছে শাওনরা- সে গল্পও হয়েছে বেশ কিছু সময়। সন্ধ্যা নামতেই বিনয়ের সুরে- রাইত অই গেছে ভাই, মা আঁরে টোগাইবো -বলেই বিদায় নিলো স্বপ্নবাজ এই ছোট্ট মাঝি।