ওপেনাররা দিয়েছিলেন দুর্দান্ত শুরু। তাতে পাওয়ার প্লেতে ভালো সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্ত আর সৌম্য সরকারের বিদায়ে মাঠে নামে বৃষ্টি। তাতে যেন রানের চাকা থেকে ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ সরে যায়। সেই দুর্দান্ত শুরুর পথ রোধ হয়ে যায় ফিকে। তাতে শেষ পাঁচ ওভারে আসেনি টি-টোয়েন্টি উপযোগী রান। নির্ধারিত ওভার শেষে তাই সংগ্রহটাও মাত্র ১৪৪। যা শুরুর ঝড়ের পর বেমানান।
অথচ শান্ত-সৌম্যর ব্যাটে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৩ রান পেয়েছিল বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভার থেকে আসে এক উইকেট হারিয়ে ৪৭ রান। প্রতি ৬ ওভার করেও টাইগারদের ইনিংস ভাগ করলেও ১২ ওভারে রান থাকার কথা ছিল ৯৪, আর ১৮ ওভার শেষে তা ১৩৪। কিন্তু সপ্তম ওভার থেকেই রানের চাকা হয়ে যায় গতিহীন। যে গতি আর ফিরে আসেনি। তাতে প্রতিপক্ষদের দেওয়া লক্ষ্যটা দেড়শোও পার হয়নি।
এই সংগ্রহের পথে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন আফিফ হোসেন। ২৭ বল খেলা এই ব্যাটারের ইনিংসটি সাজানো ছিল দুটি চার ও দুটি ছক্কায়। আর শেষ দিকে এক ছক্কা আর দুই চারে ১২ বলে ২০ রানের ‘ইম্প্যাক্টফুল’ ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
তবে ম্যাচ শুরুর আগে আলোচনার কেন্দ্রতে ছিল টাইগারদের ওপেনার নিয়ে। সংবাদ সম্মেলনে সাকিব ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন লিটন তাদের উদ্বোধনী ব্যাটারের ভাবনায় নেই। অন্যদিকে শান্ত-সৌম্যকে নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। তবুও বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এ দুজনেই ওপেনিং ভরসা খুঁজে পায় টাইগারদের টিম ম্যানেজমেন্ট।
শান্তর ব্যাটে রানের ঝলক দেখা দিলেও সৌম্য সরকার হতাশই করেছেন। অথচ টাইগারদের ব্যাটিং ইনিংসের বাউন্ডারির শুরুটা করেছিলেন সৌম্যই। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই ক্লেসানকে চার মারেন। তারপর সৌম্যর ব্যাট থেকে এসেছে আরও একটি চারের মার। তবুও ১৪ বল খেলে ১৪ রানের বেশি তিনি করতে পারেননি।
ভ্যান মেকারেনের শর্ট বল উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা বাস ডি লিডির হাতে ধরা পড়েন তিনি।
সৌম্যর বিদায়ের পর টিকে থাকতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তও। ঠিক ৬ বল পর ৬ রান যোগ করতেই বিদায় নেন তিনি। টিম প্রিঙ্গলের আউটসাইড অফের বল সুইপ করে শর্ট লেগ সাইড দিয়ে বাউন্ডারি মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ভেন বেক তা তালুবন্দী করে নেন। ফেরার আগে ২০ বলে ২৫ রান করেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে চারটি বাউন্ডারি।
তারপর থেকেই কমে যায় রানের চাকার গতি। সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস ধুকছিলেন। কিন্তু পেরে উঠেননি। উল্টো বিদায় নেন এ দুজন। ১১ বলে ৯ রান করে লিটন ও ৯ বলে ৭ রান করে সাকিব। অধিনায়কের পরিণতি দুই ওপেনারের মতো হলেও লিটন ক্যাচ দিয়েছেন মিড-অফে।
খেলা যখন গড়িয়েছে ৯.৩ ওভারে। শারিজ আহমেদের বলে সুইপ করে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারলেন আফিফ হোসেন। ঠিক তখনই অশ্রু ঝড়ালো আকাশ। স্থানীয় সময় বিকেল ৩ টা ৫০ মিনিটে বন্ধ হলো খেলা। তবে সেই বৃষ্টি তিন মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়। এর মিনিট দুই পরেই ফের মাঠে নামলেন আফিফ ও ইয়াসির আলি। শারিজও শেষ করলেন ওভারের কোটা।
বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হলেও টাইগারদের ব্যাটিং ভাগ্য বদলায়নি। উল্টো গতিহীন রানের চাকা ছুটে চলা ছিল অবিরাম। সেই সঙ্গে পরের ওভারের শেষ বলেই পতন পঞ্চম উইকেটের। মেকারানের ডেলিভারিটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩৯ কিলো। সেই গতির ইয়র্কার ইয়াসিরের চোখ ফাঁকি দিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। বোল্ড হয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে।
তারপর ক্রিজে নতুন ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান এলেও টাইগারদের রানের চাকা আর সচল হয়নি। উল্টো ১৮ বল খেলে ১৩ রান করে আউট হয়ে যান সোহান।
ডাচদের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট নিয়েছেন পল ভেন মেকারান ও বাস ডি লিডি। শারিজ, প্রিঙ্গল, লোগান ও ক্লাসেন নিয়েছেন একটি করে উইকেট।