ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪ |

EN

কুখ্যাত সন্ত্রাসী সম্রাট অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, জুলাই ৫, ২০২২

কুখ্যাত সন্ত্রাসী সম্রাট অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার
কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহানা সুলতানা বনির ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী জেড এম সম্রাটকে অস্ত্র, মাদক ও ওয়াকিটকিসহ তার টর্চার সেল থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১২ সিপিসি-১এর একটি অভিযানিক দল টিম। মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) দুপুর ১২টায় এবিষয়ে র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান এক প্রেস ব্রিফিং এ সংবাদ মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।

গ্রেফতার হলেন- কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুরের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম এবং শহর মহিলা লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাহানা সুলতানা বনির ছেলে জেড জেড এম সম্রাট(৩৩), তার দুই সহযোগী যথাক্রমে পশ্চিম মজমপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম রসুলের ছেলে দ্বীন ইসলাম রাসেল (৩৩) এবং জুগিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ওসমান হাসান (৩১)। তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। 

র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডার জিম্মি, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি, তুলে নিয়ে মুক্তিপন আদায়, টর্চার সেলে নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে নির্মমভাবে টর্চার করে মোটা অংকের চাদা আদায়সহ নানা অপরাধে জড়িত প্রায় অর্ধ ডজন মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী জেড এম সম্রাটের নেতৃত্বে কতিপয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনী শহরজুড়ে সাধারণ জনমনে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এমন একাধিক অভিযোগ ও জিডি সূত্রে র‌্যাবের অভিযানিক দল সম্রাটের মজমপুরস্থ অফিস কাম টর্চার সেলে অভিযান চালায়। 

তিনি আরও বলেন, এসময় সেখানে তল্লাশি চালিয়ে ৮রাউন্ড গুলিসহ একটি ওয়ান শুটার গান, ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, হেরোইন, ইয়াবা, গাজা সহ নানা ধরণের মাদকদ্রব্য, ৪টি ওয়াকি টকিসহ বেশকিছু  দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

সেখান থেকে তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রন আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি (অস্ত্র, মাদক ও টেলিকম) মামলা দায়ের পূর্বক কুষ্টিয়া মডেল থানায় সৌপর্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১২ র ওই কর্মকর্তা।

গ্রেফতার জেড এম সম্রাটের মা কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর সাহানা সুলতানা বনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে যুবলীগ নেতা সম্রাটকে কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক নেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেন। যখনই এদিক ওদিক হেরফের হয় তখনই আবার র‌্যাব পুলিশকে দিয়ে গ্রেফতার করে অস্ত্র ও মাদক ধরিয়ে দিয়ে মামলায় ফাসিয়ে দেয়া হয়। এর আগেও আরও একাধিক বার র‌্যাবকে দিয়ে আমার ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছে ওরা। আমি এর বিচার চাই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী চরমপন্থী নেতা অপরাধ জগতের গড ফাদার গনমুক্তি ফৌজের অন্যতম নেতা মুকুলের শীর্ষসহযোগী জেড এম সম্রাট মাদক-অস্ত্র ব্যবসা, চোরাচালান, চাদাবাজী, টেন্ডারবাজী সহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসী মুকুল। মুকুল পালিয়ে গেলেও থেমে নেই তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ প্রায় সব সরকারি দপ্তরের কাজই দেশের বাইরে বসে জেড এম সম্রাটের মাধ্যমে সরকারী কর্মকর্তাদের হুমকি ধামকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে মুকুল। 

২০২০ সালের ২৬ জুলাই ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৩টি ম্যাগজিন ও ৯ রাউন্ড গুলিসহ র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় সম্রাট এবং তার সহযোগী দ্বীন ইসলাম। তারপর ২০১৬ সালে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলিভর্তি ম্যাগজিনসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় জেড এম সম্রাট এবং সেই মামলায় ২০১৭ সালে ১০ বছরেও কারাদণ্ড হয় সম্রাটের। 

জেল থেকে বেরিয়ে পুনরায় সম্রাট কুষ্টিয়া শহরে ফেনসিডিলের ব্যবসা ও অবৈধ অস্ত্র বহন করে কুষ্টিয়ায় টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীমুলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এই ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সমাট উঠতি বয়সী মাদকে আসক্ত বিভিন্ন এলাকার ছেলেদের দিয়ে। এই কাজে নিয়োজিত ছিল প্রায় ডজন খানিকের বেশি সম্রাটের বেতনভুক্ত কর্মীবাহিনী। বেতনভুক্ত কর্মীবাহিনী দিয়ে প্রতিদিন ইয়াবা, ফেন্সিডিল এবং অস্ত্রর বড় বড় চালান কুষ্টিয়া সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিচালিত করতো।