ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, অক্টোবর ২১, ২০২৪ |

EN

ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত লিটনের আকুতি, ‘মেয়ের জন্য বাঁচতে চাই’

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২২

ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত লিটনের আকুতি, ‘মেয়ের জন্য বাঁচতে চাই’
মাস ছয়েক আগেও মোবাইল সার্ভিসিং করে সংসার চালাতেন সাজেদুল ইসলাম লিটন (৩৬)। রোজ সকালে দোকানের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় তিন বছর বয়সি একমাত্র কন্যা ইনতেছার নাওয়ার পিছু নিত বাবার। না নিয়ে গেলেই কান্নাকাটি। আবার যত রাতই হোক বাবার ফেরার অপেক্ষা করত মেয়ে। খেলনা-খাবারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের আবদার করত!

অল্প উপার্জনের সংসারে শত অভাব থাকলেও হাসিখুশিতে ভরপুর ছিল ছোট্ট পরিবারটি। কিন্তু হঠাৎ করেই দুই চোখ বাঁকা হয়ে যায় লিটনের। শুরু হয় প্রচুর মাথাব্যথা। বিছানা এখন নিত্যসঙ্গী লিটনের। বন্ধ হয়ে যায় তার দোকান। চিকিৎসক দেখানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে লিটন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত! রোগটি মস্তিকে ছড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত অপারেশন করাতে হবে, নইলে পরিবারকে যে কোনো করুণ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু তাই নয়, উচ্চ ডায়াবেটিসও ধরা পড়ে লিটনের শরীরে।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অসুস্থতায় সংসারে জেঁকে বসেছে অভাব। কোথায় পাবেন টাকা? কীভাবে করবেন চিকিৎসা— এমন চিন্তায় পরিবারে নেমে এসেছে বিষাদের। 

পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে লিটন এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে কর্মক্ষম এই যুবক। পাড়াপ্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের সহযোগিতায় চলছে অসহায় এই পরিবারটি।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সাজেদুল ইসলাম লিটনের বয়স যখন ১১ বছর, তখন মারা যান তার মা দুলালী খাতুন। এর পর ফের বিয়ে করেন বাবা শাহজাহান আলী। হাইস্কুলে পড়াকালীন বাবার ছোট্ট মুদি দোকানে বসা শুরু করেন লিটন। এর কিছু দিন পর মোবাইল সারানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই মহেলা বাজারে ছোট্ট একটি দোকান করেন। এর পর বিয়ে করেন।  

জমি বলতে কিছুই নেই। বাবার বাড়ির পেছনের একটি ঘরে স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাসন্তান নিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করছেন লিটন। হঠাৎ অসুস্থতায় রাজশাহী হয়ে অবশেষে ঢাকার ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতালে ডাক্তার দেখান তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে ব্রেন টিউমার। অপারেশন করাতে প্রয়োজন প্রায় ৫-৭ লাখ টাকার মতো। এদিকে এনজিও থেকে ঋণ এবং স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো ঋণ হয়ে যায়। দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আয় বন্ধ হয়ে গেছে তার, অপারেশনের টাকা কোথাও থেকে জোগাড় করতে পারছেন না।  

মেয়ে ইনতেছার নাওয়ারকে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাজেদুল ইসলাম লিটন বলেন, আমি এক হতভাগা! আদর কী বুঝে ওঠার আগেই ছোটবেলায় মারা যান আমার মা। মেয়ের জন্মের পর আমার সেই মাকে খুঁজে পেয়েছি। আমার কষ্ট দেখে মেয়েটাও কাঁদে। আর খেলনা, খাবারের আবদার করে না। আমি আমার মেয়ের জন্য বাঁচতে চাই। সবার প্রতি অনুরোধ, আমাকে বাঁচান।

কামরুল হাসান ও মেহেদী হাসান আরিফ নামে লিটনের দুই বন্ধু জানান, ছোটবেলায় টাকাপয়সা দেওয়াসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন লিটন। অথচ এখন তার করুণ অবস্থা। যে ছেলে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়াসহ ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে কোনো কাজ করে না, অথচ তার ভাগ্যে এমন হবে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে লিটনের চিকিৎসা খরচ দিতে পারছি না। তবে সমাজে বিত্তশালী মানুষ আছেন, যারা সহযোগিতা করলে অসহায় এ পরিবারটিতে হাসি ফিরতে পারে।