ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, অক্টোবর ২১, ২০২৪ |

EN

জামাই মেলার জন্য সাজ সাজ রব, বাঘাইড়ে হতাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২২

জামাই মেলার জন্য সাজ সাজ রব, বাঘাইড়ে হতাশ
বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার পূর্ব বগুড়ার গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। প্রাচীন এ মেলায় অংশ নিতে আয়োজক ও ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

স্বজনদের আপ্যায়ন করতে মেলার আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে ধুম পড়ে গেছে। চারদিকে সাজ সাজ রব।

তবে বনবিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এ বছর মেলায় প্রধান আকর্ষণ বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। এতে ওই মাছের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গত ২০০ বছর পূর্বে থেকে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন গাড়ীদহ নদী তীরে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা বসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষ মেলায় এসে কেনাবেচা করেন।

মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এসে ভরে যান। ঈদ বা অন্য কোন উৎসবে মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি ও অন্য স্বজনদের দাওয়াত করা সম্ভব না হলেও এ মেলায় দাওয়াত করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

মেলা একদিনের হলেও ওই এলাকায় আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। মেলায় কেনাকাটার জন্য নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার বছরের শুরু থেকে মাটির ব্যাংক অথবা অন্য কোথাও সঞ্চয় করে থাকেন।

এই মেলাকে ঘিরে উপজেলার দুর্গাহাটা, সুবোধ বাজার, দাঁড়াইল বাজারসহ কয়েকটি স্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানো হয়।

মেলায় প্রধান আকর্ষণ হলো বাঘাইড়সহ নানা প্রজাতির বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা স্টিলের ফার্নিচার, বড়ই (কুল), কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্যদ্রব্য। এছাড়া চিত্ত বিনোদনের জন্য সার্কাস, নৌকাবাইচ, মাইক্রো-কার খেলা, জাদু ও নাগোরদোলার আয়োজন করা হয়। মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মণ্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেয়া হয়।

বাংলার প্রতি বছরের মাঘ মাষের শেষ বা ফাল্গুনের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি মেলা হলেও ইতোমধ্যে কিছু দোকানঘর স্থাপন করা হয়েছে। হরেকরকম মিষ্টি তৈরির প্রস্তুতি চলছে।

এ ব্যাপারে মণ্ডল পরিবারের সন্তান মহিষাবান ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চলছে।

এলাকার লুৎফর রহমান সরকার স্বপন, আব্দুর রহিম মোল্লাসহ অনেকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা প্রায় ২০০ বছর পূর্বে থেকে হয়ে আসছে। এই মেলাকে ঘিরে এলাকার প্রতিটি বাড়িতে মিলন মেলা হয়। কর্তৃপক্ষ অনুমোদন না দিলেও এলাকাবাসী মেলা সম্পন্ন করে ফেলে।

মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাটি করোনার কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে মেলাটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

এদিকে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন এক চিঠিতে জানিয়েছেন, পোড়াদহ মেলায় প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ মহাবিপন্ন প্রাণী বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা হয়; যা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মেলায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ নিষেধাজ্ঞার চিঠি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মৎস্য কর্মকর্তা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১৬ দফতরে দেওয়া হয়েছে।

গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান জানান, বন বিভাগের চিঠি পেয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।