ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, অক্টোবর ২১, ২০২৪ |

EN

ফুলবাড়ীতে চাল সংগ্রহে আশা জাগলেও ধানে লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে সংঙ্কা

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: সোমবার, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২২

ফুলবাড়ীতে চাল সংগ্রহে আশা জাগলেও ধানে লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে সংঙ্কা
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে,চাল সংগ্রহে আশার মুখ দেখলেও,মুখ থুবড়ে পড়েছে ধান সংগ্রহে। গত দুই মাসে সরকারিভাবে ৩ হাজার ৪৯৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হলেও, ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬ মেট্রিক টন। ফলে চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হলেও ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জন হওয়া নিয়ে সংঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক নাসিম আল আকতার জানান, ফুলবাড়ী উপজেলায় দু’টি সরকারি খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে অভ্যন্তরীণ আমন মৌসুমে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ক্রয় করার লক্ষে ২৭ টাকা কেজি দরে এক হাজার মেট্রিক টন ধান এবং ৪০ টাকা কেজি দরে ৩ হাজার ৯৪৪ মেট্রিক টন চাল মিলারদের নিকট থেকে ক্রয় করার জন্য গত বছরের ২৩ নভেম্বর থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়।

উপজেলায় ১৫২ জন মিলারের মধ্য থেকে ১৪০ জন মিলার সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দেওয়ার অনুমোদন পেয়েছেন। মিলারদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, উদ্বোধনের দিন থেকে এ পর্যন্ত গত দুই মাসে ফুলবাড়ী ও মাদিলাহাট এই দু’টি সরকারি খাদ্য গুদামে ৩ হাজার ৪৯৮.৩৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আর কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬ মেট্রিক টন। যা লক্ষ মাত্রা পুরনের সংস্কা দেখা দিয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের নির্ধারিত সময় রয়েছে।

উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,গত আমন চাষ মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে, চাষাবাদ হয়েছে ১৮হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৭৭ হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন ধানে, যা চালে ৫১ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন। এই উপজেলায় কার্ডধারী কৃষকের মোট সংখ্যা ৩২ হাজার ৫৫০ জন। এর মধ্যে সরকারি গুদামে চাল দেওয়ার জন্য লটারির মাধ্যমে ৬৫০ জন কৃষক আবেদন করার সুযোগ পায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে মিলারদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হওয়ার আসা থাকলেও সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে স্থানীয় বাজারে দেড় থেকে দুই শ’ টাকা ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এবং প্রক্রিয়াজাত করনে সমস্যা মনে করে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে ধান সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এদিকে কৃষকরা বলছেন, সরকার ২৭ টাকা কেজি দরে ধানের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে স্থানীয় বাজারে মন প্রতি দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা ধানের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। একইসাথে সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে ১৪ শতাংশ ময়েশ্চারাইজার বা আর্দ্রতা লাগে এবংপ্রক্রিয়াজাত করনসহ গুদামে ধান ঢুকাতেও নানা ঝামেলা পোহাতে হয় তাদের। অথচ ওই ধান বাজারে দাম বেশি  ময়েশ্চারাইজার মাপার ঝামেলা নেই তাই বাজারেই ধান বিক্রি করছেন তারা। ফলে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা।

ফুলবাড়ী উপজেলা ধান-চাল মিল মালিক সমিতির আহবায়ক প্রভাষক মো. মঞ্জিল মোরশেদ ও যুগ্ন আহব্বায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, উপজেলার মিলাররা খাদ্যগুদামে চাল দিচ্ছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাল সরবরাহ সম্পন্ন করা হবে বলে আসা করছেন তিনি। মিলাররা যেহেতু সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ তাই লোকসান হলেও মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে বাধ্য। আর কৃষকরা সরকারের কাছে বাধ্য না তাছাড়া গুদামে ধান দিতে নানা ঝুক্কি ঝামেলা অথচ সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজরে দাম বেশী তাই কৃষকরা গুদামে ধান না দিয়ে বাজারেই বিক্রি করছেন।

ফুলবাড়ী খাদ্য গুদাম এর পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনিমেষ সরকার ও উপজেলার মাদিলাহাট সরকারী খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন জানান, আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হবে। তবে বাজারে ধানের দাম পাওয়ায় গুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা।

ফুলবাড়ী উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজ উদ্দিনা বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনিহা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।