ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, অক্টোবর ২১, ২০২৪ |

EN

বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবি: এখনও ২৭ জেলে নিখোঁজ, ২ লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২২

বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবি: এখনও ২৭ জেলে নিখোঁজ, ২ লাশ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

ঝড়ের কবলে পড়ে সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ২৫ ফিসিং ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ২৭ জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আর ২ জেলের লাশ উদ্ধার হয়েছে। 

উদ্ধারকৃত দুইটি লাশের মধ্যে একজন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের আনোয়ার শেখের ছেলে আল মামুন শেখ (২৫) বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে কোস্টগার্ডের দুইটি জাহাজসহ শতাধিক ফিশিং ট্রলার উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। নিখোঁজ জেলেদের বাড়ী বাগেরহাট, পিরোজপুর, রবগুনা ও পটুয়াখালী জেলায়। নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া ও রামপাল উপজেলায়। 

গত শুক্রবার রাত ১০টায় বঙ্গোপসাগরের দুবলার চর থেকে ৪৫ কিলোমিটার গভীর সাগরে মাছের খনি হিসেবেখ্যাত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ইলিশ ও সুন্দরবনের দুবলায় শুঁটকির জন্য মাছ আহরনে থাকা এসব ফিশিং ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগ, দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ ও উদ্ধার অভিযানে থাকা নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা ফরেষ্ট ষ্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় জানায়, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও গত নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের দুবরার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মাছ আহরণ মৌসুম। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীতে সামুদ্রিক মাছ ধরতে আসেন প্রায় ৩০ হাজার জেলে। এসব জেলেরা দুবলাসহ আটটি চরে অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন। সেখানে থেকেই তারা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরেন। দুবলার জেরে পল্লীর ফিশিং ট্রলার ছাড়াও ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণে সুন্দরবন উপকূলের মাছের খনি হিসেবেখ্যাত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে শত-শত ফিশিং ট্রলার মাছ আহরণে থাকে। 

তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবারও মাছ ধরার সময় হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে দুবলার চর ৪৫ কিলোমিটার গভীর সাগরে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অন্তত ২৫টি ফিসিং ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া যায়। ডুবে যাওয়া এসব ফিশিং ট্রলারের মধ্যে দুবলা জেলে পল্লীর ৮টি এবং তার পাশ্ববর্তী এলাকা আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর আরও ১০ টি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। অন্য ফিশিং ট্রলারগুলো ইলিশ আহরনে সাগরে ছিল। গতকাল শনিবার বিকাল পর্যন্ত অন্য ট্রলারের সাহায্যে ১৫৪ জেলে ফিরে আসতে পারলেও এখনো ২৭ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে কোস্টগার্ডের দুইটি জাহাজসহ দুবলার ১০০ ট্রলার উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। 

বন বিভাগের এই কর্মকর্তা নিখোঁজদের মধ্যে বাগেরহাটের রামপালের দূর্গাপুর গ্রামের মো. ইদ্রিসের ছেলে শাহিনুর ও ইসলামাবাদ গ্রামের মো. ছোট্টোর ছেলে মোতাচ্ছিনের নাম পরিচয় জানাতে পেরেছেন। এদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুবলার চরের প্রায় দুই কোটি টাকার শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দুবলা ফরেষ্ট ক্যাম্পের ওসি প্রহ্লাদ চন্দ্র রায়।

সুন্দরবনের দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ সন্ধ্যায় জানান, শুক্রবার হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে দুবলা শুঁটকি পল্লীর ১৮টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। এরমধ্যে দুবলায় ৮টি ও আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর ১০টি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। ভোর থেকেই দুবলা শুঁটকি পল্লীর মতাধিক ট্রলার নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো দুবলা শুঁটকি পল্লীর ৩ জেলে নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তাদের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি এই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।

মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে ভোর থেকে কোস্টগার্ড উদ্ধার চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর যতোক্ষন সমুদ্রে দেখা যায় ততক্ষণ কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান চালাবে। রবিবার ভোর থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে কোস্টগার্ড।