ভারতীয় ফুটবল কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘ময়দান’ সিনেমা। তিনি ছিলেন হায়দরাবাদের, কর্মস্থল ছিল কলকাতায়। খেলোয়াড় চেনায় ছিলেন ওস্তাদ। সেই সময়ের কম কোচেই তার মতো খেলা নিয়ে স্ট্র্যাটেজি করতে পারতেন।
এমন গল্প নয় ময়দান— এলাম, দেখলাম আর জয় করলাম। বরং ফেডারেশনের রাজনীতি, নানা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে পোড় খাওয়া, হার না মানা এক কোচের গল্প নিয়ে এ ছবি। বারবার ব্যর্থ হয়েছে দল। তারপরও ঘুরে দাঁড়িয়ে আবদুল রহিম নিজের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন— চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো রসদ তার দলেই আছে। দরকার শুধু তাদের সাহস জোগানো। তাই হেরে গেলেও খেলোয়াড়দের বুকে আগলে রাখেন রহিম।
ময়দান ছবির গল্পে আরও দেখা যাবে—সৈয়দ আবদুল রহিমের একটি বদভ্যাস আছে। ঘন ঘন সিগারেট খেতেন তিনি। তার হাতে সিগারেট নেই— এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত ফুসফুস ক্যানসার হয় তার। কোচিং ছেড়ে চলে যান বাড়িতে। সামনে ‘নিশ্চিত’ মৃত্যু। কিন্তু স্ত্রী সায়রাও ছিলেন সাহসী এক নারী। তিনিই স্বামীকে প্রেরণা জোগান— এভাবে মরে যাওয়ার চেয়ে নিজের স্বপ্নের পেছনে ছোটাই ভালো। ফিরলেন আবার কলকাতা। দল ততদিনে নতুন কোচ নিয়োগ দিয়েছে। রহিম সবার কাছে হাত জোড় করে আবার একটা সুযোগ চান। সুযোগ মেলে বটে, তবে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে যাত্রা করার আগে পান নতুন দুঃসংবাদ। ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ততদিনে রহিমের সেই তেজ নেই, ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে লড়তে তার শারীরিক অবস্থাও সঙ্গীন। তবু হাল ছাড়েন না রহিম। নাছোড়বান্দা কোচ কীভাবে দলটিকে নিয়ে অসাধ্যসাধন করেন, ‘ময়দান’ সে কথাই বলবে।
‘ময়দান’ ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগন। কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমের চরিত্রে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছেন তিনি। তার স্ত্রীর চরিত্রে আছেন অভিনেত্রী প্রিয়া মণি। কলকাতার সাংবাদিকের চরিত্রে গজরাজ রাও ও ফুটবল সংগঠকের চরিত্রে রুদ্রনীল ঘোষও দারুণ অভিনয় করেছেন।
‘ময়দান’-এর বেশিরভাগ ছবির শুটিং হয়েছে কলকাতায়। ছবিটি আরও দুই বছর আগে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে বারবার পিছিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত মুক্তির পর দর্শকদের অপেক্ষা সার্থক হয়েছে। ময়দান সিনেমার নির্মাতা অমিত রবীন্দ্রনাথ শর্মা। এর আগের সিনেমা ছিল ‘বাধাই হো’। সেই সিনেমাটি দর্শক-সমালোচকের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কমেডি ঘরানার ছবি থেকে বেরিয়ে এসে এবার সম্পূর্ণ ভিন্নধারার ছবি বানিয়ে নিজের কাজের বৈচিত্র্যের প্রমাণ দিলেন তিনি।
পরিচালক ‘ময়দান’ ছবিতে অভিনয়শিল্পীদের পারফরম্যান্স, ১৯৫০-৬০ সালের কলকাতাকে বিশ্বাসযোগ্য করে পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সমালোচকরা এ সিনেমা নিয়ে প্রশংসা করেছেন। গত এক দশকে ভারতে খেলা নিয়ে প্রচুর সিনেমা তৈরি হয়েছে, খেলোয়াড়দের বায়োপিকের সংখ্যাও কম নয়। তবে সব সিনেমার মধ্যেও যেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম অমিত রবীন্দ্রনাথ শর্মার ‘ময়দান’। মুক্তির পর বেশিরভাগ সমালোচকের মতে— খেলা নিয়ে ভারতের অন্যতম সেরা সিনেমা এটি। অমিত শর্মা অতি বাণিজ্যিকীকরণ করার চেষ্টা না করে গল্পকে বাস্তবসম্মতভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এ জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।