ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, জুলাই ১, ২০২৪ |

EN

পদ্মা সেতুর ফলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে কৃষিপণ্য বিপণনে

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শুক্রবার, ডিসেম্বর ২, ২০২২

পদ্মা সেতুর ফলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে কৃষিপণ্য বিপণনে
স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত অনন্য পদ্মা সেতু বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক, সক্ষমতার প্রতীক। এই সেতু বিশ্বের কাছে নতুন করে তুলে ধরেছে বাংলাদেশকে। পুরো দেশ তো বটেই, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এই পরিবর্তন উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আরেকটি মাইলফলক।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতেও বড় ধরনের গতিশীলতা এসেছে। বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে কৃষিপণ্য বিপণনে। এর সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কৃষিতে। জেলাগুলোর রপ্তানিমুখী কৃষিভিত্তিক পণ্য অল্প সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাচ্ছে। ফলে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও আর নেই। এতে চাঙা হয়েছে পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি-অর্থনীতি।

তবে এত পরিবর্তনের মধ্যেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখনো সেভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি এই অঞ্চলে। এরপরও আশার কথা হলো পদ্মা সেতু যেহেতু উদ্বোধন হয়েছে, সেই হিসেবে ধীরে ধীরে সেতুপাড়ে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এমনটিই প্রত্যাশা সেতুপাড়ের মানুষের।

যেসব জেলা পদ্মা সেতু থেকে সরাসরি লাভবান হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।

আরও পড়ুন: ‘পদ্মা সেতুর সুফল ভোগে শরীয়তপুরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে না’

পদ্মা সেতুর উপকারভোগী হলেও পদ্মাপাড়ের অন্য জেলাগুলোর মতো শরীয়তপুরে এখনো শিল্পকারখানা তেমন গড়ে ওঠেনি। জেলায় বর্তমানে ৪০৫টি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং ৩ হাজার ১১৮টি কুটির শিল্প রয়েছে। এছাড়া ডামুড্যা ও নড়িয়া উপজেলায় দুটি রাইস মিল, ১৪৪টি স’মিল রয়েছে। শরীয়তপুর জেলায় ১৬৪টি চালকল, ১১২টি আটার কল, চারটি ময়দার কল, ১৩টি বরফকল, তিনটি তেলের মিল ও ৩০টি ইটভাটা আছে।
বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তাদের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে শরীয়তপুর সদরে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। এখানে বরাদ্দযোগ্য ১৪৯টি প্লট ১৪২টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্তমানে কিছু শিল্পকারখানা চালু আছে। এসব শিল্পকারখানায় বছরে প্রায় কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য মানুষের। পদ্মা সেতুর প্রভাবে অর্থনৈতিক কলেবর কয়েকগুণ বাড়বে বলেও প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (জেলা বাজার অনুসন্ধানকারী) মো. ইউসূফ হোসেন জাগো নিউজেকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে কৃষি বিপণনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। তবে সেভাবে শিল্পকারখানা এখনো গড়ে ওঠেনি। সেতু উদ্বোধনের পর নতুন করে শিল্পকারখানা হয়নি। তবে আমরা আশা করছি, দ্রুতই শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। কারণ এখন বৈশ্বিক মন্দা চলছে। মানুষের হাতে টাকা নেই।

শরীয়তপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী দ্রুত সময়ে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে পদ্মা সেতুপাড়ে। জেলার সখিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জামাল উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, সেতু উদ্বোধনের পর আবাসন হয়েছে। তবে মিল-কারখানায় অগ্রসর হয়নি। যদিও কৃষিপণ্যের বাজারজাত সহজ হয়েছে। আগে শরীয়তপুর থেকে ট্রলারে সবজি যেতো ঢাকায়। এখন জাজিরা থেকে ঢাকায় যাচ্ছে। শরীয়তপুরে প্রচুর পান চাষ হয়। এসব পান এখন ঢাকা হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।

পদ্মা সেতু ঢাকায় মাছ বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সুবিধা বয়ে এনেছে বলে জানান তিনি। বলেন, আগে বরিশাল থেকে ঢাকায় মাছ নিয়ে যেতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকায় যাচ্ছে বরিশালের তাজা মাছ। এতে একদিকে যেমন টাটকা মাছ পাচ্ছেন ঢাকাবাসী, তেমনি এই অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যচাষিরা লাভবান হচ্ছেন আর্থিকভাবে।

নড়িয়া পৌরসভার মেয়র মো. আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, মাওয়া থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত সড়কে চারর লেন হবে। এই সড়ক হলে শিল্পমালিকরা কলকারখানা নির্মাণ করবেন। যোগাযোগ বাড়লে বিনিয়োগও বাড়বে।

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় একটি পোশাক কারখানা গড়ে উঠবে বলে জানা গেছে। এ খবরে আশার আলো দেখছেন এলাকাবাসী। তবে বর্তমানে পোশাক কারখানা না থাকলেও তাদের কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ ত্বরান্বিত হয়েছে বলে জানান তারা।

ডামুড্যা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন মাঝি জাগো নিউজকে বলেন, ডামুড্যা উপজেলায় একটি পোশাক কারখানা নির্মাণ করা হবে। এক ব্যবসায়ী এটা নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়া অন্যান্য কারখানা বা শিল্প এখানে নেই। কয়েকটি রাইস মিল ও স’মিল আছে। পদ্মা সেতু যেহেতু হয়েছে, কিছু শিল্পকারখানা হবে- সেই দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। আমরা বিনিয়োগকারীদের বলবো আপনারা পদ্মা সেতুর এ পাড়ে শিল্পকারখানা গড়ে তুলুন। এখানে সস্তায় শ্রমিক ও ভূমি প্রস্তুত আছে।

কৃষি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এখানে ধান, পাট, মরিচ রবিশস্যা ও সবজির চাষ হয়। এখন রাস্তাঘাট ভালো আছে। এসব পণ্য দ্রুত ঢাকায় যাচ্ছে।

গত ২৫ জুন বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১২টা ০৬ মিনিটে সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর জাজিরার অভিমুখে রওয়ানা হয়। এর আগে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে নিজ হাতে নির্ধারিত টোল দেন প্রধানমন্ত্রী।

ওইদিন দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়। উন্মোচিত হয় যোগাযোগের নতুন দিগন্ত। এ যেন বাঙালির স্বপ্ন ও সাহসের জয়। সেই সঙ্গে খুলে যায় আরও শত সহস্র স্বপ্নের দুয়ার।

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনসহ সবাই বলছেন, নিজেদের টাকায় তৈরি পদ্মা সেতু দেশের উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। অবসান হবে দীর্ঘদিনের যোগাযোগের ভোগান্তি। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। অবহেলিত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। ঘুচবে বেকারত্বের অভিশাপ।