বিনোদন ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
বাংলাদেশের
চলচ্চিত্র ভুবনে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও মুকুটহীন নবাব নামে-খ্যাত বরেণ্য অভিনেতা আনোয়ার
হোসেন। দীর্ঘ পাঁচদশকেরও অধিক সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বিরামহীন অভিনয়ের মধ্য দিয়ে
তিনি জয় করেছেন সর্বস্তরের দর্শককে। তাইতো তিনি নবাব হয়েই বেঁচে আছেন সবার মনের মণিকোঠায়।
ঢাকার
চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি অভিনেতা ৫২ বছরের অভিনয় জীবনে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয়
করেছেন। তিনি সর্বশেষ কাজ করেছেন ২০০৬ সালে কাজী মোরশেদ পরিচালিত ‘ঘানি’
ছবিতে।
আজ
১৩ সেপ্টেম্বর কীর্তিমান এই অভিনেতার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এইদিনে ৮২ বছর
বয়সে তিনি না-ফেরার দেশে চলে যান। আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর
জেলার মুরুলিয়া গ্রামের মিয়াবাড়িতে। বাবা এ কে এম নাজির হোসেন ছিলেন জেলা সাব-রেজিস্টার।
তার মায়ের নাম সাঈদা খাতুন।
নজির-সাঈদা
দম্পতির তৃতীয় সন্তান আনোয়ার হোসেন। ১৯৪০ সালে দেওয়ানগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি
হন এবং স্কুলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হন তিনি। ১৯৫১ সালে জামালপুর হাইস্কুল
থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ময়মনসিংহ কলেজে ভর্তি হন।
কলেজে
প্রথম বর্ষের ছাত্রাবস্থায় আসকর ইবনে সাইখের পদক্ষেপ নাটকে অভিনয় করার পর থেকে নাটকের
প্রতি দুর্বার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বাবার বন্ধু আবদুল্লাহ
খানের ‘সেলকন ইঞ্জিনিয়ারিং’ ফার্মে সুপারভাইজারের চাকরি নিয়ে ঢাকায়
চলে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে ১৯৫৯ সালে ননী দাসের পরিচালনায় এক টুকরো জমি নাটকে
অভিনয় করেন। ঢাকা বেতারে অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হয়ে হাতেম তাই নাটকে একটি ছোট চরিত্রে
অভিনয় করেন।
মঞ্চনাটকে
অভিনয় করতে গিয়ে পরিচয় হয় আবদুল জব্বার খান, মোহাম্মদ আনিস, হাবিবুর রহমানের সঙ্গে।
ঝিনুক পত্রিকার সম্পাদক আসিরুদ্দিনের সহযোগিতায় মিনার্ভা থিয়েটার গঠন করেন। মিনার্ভা
থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফতেহ লোহানী, মেহফুজ, সুভাষ দত্ত, চিত্রা
সিনহাসহ অনেকেই।
পরিচালক
মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুবাদে প্রথম পরিচয়েই আনোয়ার হোসেন তার অভিনয় দক্ষতা
প্রমাণের সুযোগ পান। ১৯৬১ সালে তিনি মহিউদ্দিন পরিচালিত তোমার আমার ছবিতে ভিলেন চরিত্রে
অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নজর কাড়েন। এরপর সালাহউদ্দিন পরিচালিত সূর্যস্নান ছবিতে নায়কের চরিত্রে
অভিনয় করেন।
১৯৬১
থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৮টি ছবিতে কাজ করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবিতে
নবাবের চরিত্রে অভিনয় করে পান ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি। সিরাজের দেশপ্রেমের যন্ত্রণা
দর্শকদের মনে জাগিয়ে দিতে পেরেছেন বলে ছবিটি প্রশংসিত হয়।
আনোয়ার
হোসেন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, লোককাহিনিভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি,
পরিচ্ছন্ন সামাজিক, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মী—সব
ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, আমজাদ হোসেন, ইবনে
মিজান, আলমগীর কবির, জহির রায়হান, নারায়ণ ঘোষ মিতা, সুভাষ দত্ত, নজরুল ইসলাম, চাষী
নজরুল ইসলাম, কাজী হায়াৎসহ অনেক নামীদামি পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছেন।
আমাদের
দেশে নির্মিত সূর্যস্নান, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, জীবন থেকে নেয়া, জয় বাংলা, অরুণোদ্বয়ের
অগ্নিসাক্ষী, লাঠিয়াল, পালঙ্ক, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, সখিনার যুদ্ধ, নাজমা, সূর্যগ্রহণ,
সূর্যসংগ্রাম, দায়ী কে, সত্য মিথ্যার মতো বহু সুপার হিট ছবিতে অভিনেতা হিসেবে আনোয়ার
হোসেন দাপুটে অভিনয় গুণে দর্শক মাতিয়েছেন। যেজন্য দর্শকদের হৃদয়মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন
যুগের পর যুগ।
বর্ণাঢ্য
কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাকে একুশে পদক প্রদান
করা হয়। অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার লাভ করেন। পাশাপাশি নারায়ণ ঘোষ
মিতা পরিচালিত লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে সুঅভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে
তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
আমজাদ
হোসেনের গোলাপী এখন ট্রেনেতে সহ-অভিনেতা হিসেবেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ১৯৭৮
সালে। ২০১০ সালে প্রদানকৃত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন
তিনি। এছাড়াও তিনি দুবার বাচসাস পুরস্কার এবং নিগার পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা
লাভ করেছেন।