মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সেখানে মার্কিন সমর্থক একটি পুতুল সরকার গঠন করে। আর সেই পুতুল সরকারের পতন হয়েছে সম্প্রতি। এখন আফগানিস্তান আবার একটি তালেবান রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লালন-পালন করেছিল, বিকশিত করেছিল সোভিয়েত আধিপত্য থেকে আফগানিস্তানকে রক্ষা করার জন্য, সেই তালেবানরা এখন শুধু আফগানিস্তান নয় সারা বিশ্বের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস এটি। দেশে দেশে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে মদদ দিয়েছে, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। পরবর্তীতে যখন তারা তাদের গলার কাঁটা হয়ে গেছে তখন তাদেরকে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে, ফলে সেই দেশগুলোকে বিপন্ন করেছেন। আফগানিস্তান শুধু নয়, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া একই চিত্র। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু তার শত্রুর দরকার নেই।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দৃশ্যমান হচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভাবনীয় ভাবে হস্তক্ষেপ করছে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন ব্যস্ততা অনেক বেশি। যে দেশটি নিজের দেশের মানবাধিকার নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে সেই দেশ এখন বাংলাদেশের মতো বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি দেশকে ঘিরে নতুন পরিকল্পনা আঁটছে। আর এই পরিকল্পনার দৃশ্যমান অংশ হলো বাংলাদেশের ওপর অযাচিতভাবে নানারকম চাপ সৃষ্টি করছে। এসব চাপের মূল লক্ষ্য কি তাহলে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানো? অনেকেই মনে করছেন যে, আফগানিস্তানের মত মডেল নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর বিভিন্ন রকম চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সম্পর্কে যারা নূন্যতম জ্ঞান রাখেন তারা জানেন যে, হলি আর্টিজান ঘটনার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের যে উদ্বেগজনক বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছিল সেই শঙ্কা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান। বিশেষ করে জঙ্গি আস্তানাগুলোকে সমূলে উৎপাটন করা এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের জন্য র্যাব শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সেই র্যাবের বর্তমান এবং সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শুধু নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করেনি, র্যাবের কোন সদস্যকে যেন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে না নেওয়া হয় সে জন্য মার্কিন মদদপুষ্ট ১২টি মানবাধিকার সংগঠন জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অবস্থানের ফলে সুস্পষ্ট ভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশী জঙ্গিবাদী সংগঠন গুলো।
গত কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিশ্বাসী এবং পৃষ্ঠপোষকতাকারী সংগঠনগুলোকে অত্যন্ত সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা একের পর এক অপপ্রচার, মিথ্যাচার করছে এবং শুধু শুধু সরকার নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও নানারকম অপপ্রচারে লিপ্ত। আর এ সমস্ত অপপ্রচারকে আমলে নিয়ে মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশের ব্যাপারে কি আফগান নীতি অনুসরণ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? বিশেষ করে বাংলাদেশের যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন অন্যতম অংশীদার ঠিক সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান আসলে কতটা মানবাধিকারের পক্ষে, না কতটা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, বাংলাদেশ কখনোই আফগানিস্তান হবে না। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাংলাদেশ আগের মত নির্ভরশীল নয়। তাছাড়া বাংলাদেশের জনগণ উগ্র-মৌলবাদকে কখনোই প্রশ্রয় দিবে না। তবে মার্কিন এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপ গুলোতে যে বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি কিছুটা হলেও লাভবান হচ্ছে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সৌজন্যে: বাংলাইনসাইডার