ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

সংকট নিরসনের উপায় নেই যেনো পর্যটন শহরের প্রধান সড়ক জুড়ে অবৈধ পার্কিং

মো. মাইন উদ্দিন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, জানুয়ারী ২৮, ২০২২

সংকট নিরসনের উপায় নেই যেনো পর্যটন শহরের প্রধান সড়ক জুড়ে অবৈধ পার্কিং
খাগড়াছড়ি এখন দেশের পর্যটন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি শহরের নাম। তবে এ শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়কটির দু’পাশ থাকে বাস আর ট্রাকের দখলে। শহরের প্রবেশ পথের দু’ধারে পার্কিংরত সারিসারি বাস এবং ট্রাক দেখে বুঝবারই উপায় নেই যে, এটি ‘ক’ শ্রেণীর একটি পৌর শহরের প্রধান সড়ক। যে সড়ক ধরেই চলাচল করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী ও রাঙামাটিসহ দুরপাল্লার হাজার হাজার পরিবহন। 

মহাসড়ক কিংবা আঞ্চলিক সড়কে গাড়ি পার্কিং নিষেধ থাকলেও তা কোনোরকম তোয়াক্কাই করছেন না পরিবহন চালক এবং শ্রমিকরা। যে যার মতো যেখানে ইচ্ছে সেখানেই পার্কিং করছেন বাস কিংবা ট্রাক। এতে একদিকে যেমন ব্যস্ততম সড়কটির চলাচলের পথ সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাতের বেলায় সেই ঝুঁকি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। কেননা দিনের বেলায় যেমন-তেমন, তবে সন্ধ্যে ঘনালেই খাগড়াছড়ি শহরের নারিকেল বাগান এলাকা থেকে চেঙ্গী ব্রিজ অব্দি এক কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ দখলে নিয়ে নেয় বাস আর ট্রাক চালকরা। এমন অবস্থা চলছে দীর্ঘবছর ধরে, তবে বিশ বছরের এই পুরোনো সংকট নিরসনে যেনো কোনো উপায়ই নেই।  

এদিকে অর্থাভাবে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারছেনা খাগড়াছড়ি পৌরসভা। ফলে প্রায় কুড়ি বছর আগের নির্মিত ছোট্ট বাস টার্মিনালটিতে স্থান পায় দুই থেকে তিন’শ বাস আর ট্রাক। অথচ এ জেলায় পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আর পাঁচ শতাধিক বাস যাত্রিবাহী বাস চলাচল করছে নিয়মিত। 

ট্রাকচালক জামাল হোসেন ও আলী মিয়া জানান, ‘ট্রাক পার্কিংয়ের জন্য কোনো টার্মিনাল নেই এখানে। ফলে বাস টার্মিনালেই ট্রাক রাখতে হয়। এ নিয়ে বাস শ্রমিক ও ট্রাক শ্রমিকদের মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া বাধে।’

নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করে আসছেন অথচ পৌরসভার কোনো সেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন এই দুই চালক। 

এদিকে ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কের যাত্রিবাহী নৈশকোচ চালক মামুন হোসেন ও সাইফুল ইসলাম জানান, পৌর বাস টার্মিনালটিতে কেবল পণ্যবাহী ট্রাক এবং জেলার আভ্যন্তরীণ সড়কের লোকাল বাসগুলো রাখতে দেয়া হয়। দুরপাল্লার সড়কে চলাচলকারী কোনো বাস ওই টার্মিনালে রাখতে দেয়া হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই প্রধান সড়কে বাস পার্কিং করতে হয় তাদের। আর এর জন্য মাঝেমধ্যে ট্রাফিকের মামলাও জোটে। 

খাগড়াছড়ি পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খোকন বলেন, ‘খাগড়াছড়ি’র পর্যটনকেন্দ্রগুলো সমৃদ্ধ হবার পর এ জেলায় পরিবহন চলাচল আগের চেয়ে অন্তত দশগুন বেড়েছে। তবে পুরোনো এবং ছোটো টার্মিনালটি এখনো রয়ে গেছে সেই আগের মতোই।’ 

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন চালক সমবায় সমিতির সভাপতি মনতোষ ধর বলেন, ‘শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং জনদুর্ভোগ দূর করতে একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।’

খাগড়াছড়ি’র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সুপ্রিয় দেব বলেন, ‘সড়কে এভাবে গাড়ি পার্কিং করে জনভোগান্তি সৃষ্টি করা দন্ডনীয় অপরাধ। এই দায় পৌর কর্তৃপক্ষের। বিষয়টি নিয়ে বারবার পৌরসভাকে নোটিশ করা হয়েছে। তবে কোনো সমাধান মেলেনি।’  

জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও খাগড়াছড়ি’র জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘সড়কে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পৌরসভার। পৌর প্রশাসন যদি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য সাহায্য চায় তবে আমরা অবশ্যই সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবো।’

এদিকে সংকট নিরসনে জেলা শহরের জিরো মাইল এলাকায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে এক একর জায়গা ক্রয় করেছে খাগড়াছড়ি পৌর প্রশাসন। তবে অর্থসংকটে অবকাঠামোসহ টার্মিনালের যাবতীয় নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। 

খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, একটি আধুনিক মডেল ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের জন্য অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে দেশের অন্যান্য পৌরসভার চেয়ে আয়ের দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে খাগড়াছড়ি পৌরসভা। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’র শর্ত অনুযায়ী এখানকার হাট-বাজার এবং জলমহালগুলো পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে ন্যাস্ত। ফলে সীমিত রাজস্ব আয় থেকে পৌরসভার কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করার পর উন্নয়ন করার মতো তেমন কোনো অর্থ আর অবশিষ্ট থাকে না। 

সরকারী বরাদ্দ পাওয়া না গেলে পৌরসভার অর্থায়নে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী।