ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪ |

EN

২৩ জানুয়ারি সুভাষ বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী

কলকাতায় আবার বাজবে বঙ্গবন্ধুর সেই অডিও বার্তা

ঘটনা ঠিক পঞ্চাশ বছর আগের—চলতি জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর মাত্র এক সপ্তাহ কেটেছে। কলকাতা আর ঢাকার মাঝে তখন ভিসা-পাসপোর্টের বালাই নেই। কলকাতার বিখ্যাত চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ শিশিরকুমার বসু একটা অ্যাম্বুলেন্সে চেপে সটান চলে এলেন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। দিনটা ছিল ১৭ জানুয়ারি, ১৯৭২।


নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ২০, ২০২২

কলকাতায় আবার বাজবে বঙ্গবন্ধুর সেই অডিও বার্তা
শিশিরকুমার বসুর আরেক পরিচয়, তিনি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও শরৎকুমার বসুর ছেলে। ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে নেতাজি যখন এলগিন রোডের বাড়ি থেকে শিখের ছদ্মবেশে পালিয়ে যান, সেই ‘মহানিষ্ক্রমনে’ তার গাড়ির চালকও ছিলেন তিনি। একাত্তরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় সীমান্তের বহু শরণার্থী শিবিরে ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে বহু মানুষের চিকিৎসা করেছেন। তবে সেবারের ঢাকা সফরের উদ্দেশ্য ছিল একটু ভিন্ন।

সেই বছরের ২৩ জানুয়ারি ছিল নেতাজির ৭৫তম জন্মদিবস। সেই উপলক্ষে কলকাতার নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোতে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন। যদি সশরীরে আসা সম্ভব না-ও হয়, তিনি যেন রেকর্ড করা একটি বার্তা পাঠান–সেটাই ছিল তার কাছে অনুরোধ। 

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে জাতির পিতা তখনই কলকাতা যাওয়ার সময় বের করতে পারেননি। কিন্তু নেতাজির পরিবারের অনুরোধ ফেলতেও পারেননি। কারণ সুভাষচন্দ্র ছিলেন তারও অত্যন্ত প্রিয় একজন দেশনায়ক। 

এরপর বঙ্গবন্ধু যেটা করেন, তা প্রায় অভাবিত। বাংলাদেশ বেতারের প্রকৌশলীদের ডেকে পাঠিয়ে তিনি জানতে চান, কীভাবে নিজের কণ্ঠে তিনি একটি রেকর্ডেড বার্তা কলকাতায় পাঠাতে পারেন। ওই প্রযুক্তিবিদদের পরামর্শেই স্থির হয়, ধানমন্ডির বাসভবনে রেকর্ডিং সরঞ্জাম এনে একটি স্পুলে বার্তা ধারণ করা হবে। যেভাবে তখন বেতারে ধারণ করা হতো বিভিন্ন সাক্ষাৎকার।

ওই বার্তার বয়ান যথারীতি নিজেই লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারপর পাঠ করেছিলেন তার সুবিখ্যাত ব্যারিটোন ও জলদমন্ত্র কণ্ঠস্বরে। 

সেই বার্তার একটা অংশে তিনি লেখেন, ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের ত্যাগ ও তিতিক্ষার আদর্শ সারা বিশ্বে মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিত স্বাধীনতার যোদ্ধাদের চিরকাল পথ আলোকিত করে রাখবে।’ 

বাংলাদেশে তখনকার সুপরিচিত সমাজকর্মী ও অ্যাকটিভিস্ট নীলিমা ইব্রাহিমকে ডেকে পাঠিয়ে তিনি এরপর দায়িত্ব দেন, নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর ২৩ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর বিশেষ দূত হিসেবে তাকে যোগ দিতে হবে। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে ওই স্পুল।

পঞ্চাশ বছর আগের সেই দিনটির কথা আজও ছবির মতো মনে আছে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর বর্তমান চেয়ারপারসন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ও নেতাজি-গবেষক সুগত বসুর। 

‘বঙ্গবন্ধুর গলায় সেই বার্তা যখন স্পুল থেকে বাজিয়ে শোনানো হয়, তখন সবার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। শেখ মুজিব তার বার্তায় একটা সাঙ্ঘাতিক কথা বলেছিলেন, নেতাজির লড়াই ও সংগ্রাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও আলোকবর্তিকার কাজ করেছে এবং ব্যক্তিগতভাবে তাকে প্রেরণা জুগিয়েছে।’

‘অনুষ্ঠানের দুদিন আগে স্পুলটি নিয়ে কলকাতায় পৌঁছান নীলিমা ইব্রাহিম। বঙ্গবন্ধুর বিশেষ দূত নিজেও সেদিনের অনুষ্ঠানে অত্যন্ত দৃপ্ত ও আবেগপূর্ণ এক ভাষণে নেতাজিকে স্মরণ করেছিলেন’, বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন সুগত বসু।

সেই অনুষ্ঠানের ঠিক অর্ধশতাব্দী পর, এ বছর ২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতেও সেই মুহূর্তটির পুনর্নির্মাণ করতে চলেছে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো। 

জানানো হয়েছে, নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো এ বছরের জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অডিও বার্তাটি সবাইকে বাজিয়ে শোনাবে। অর্ধশতাব্দী পর বাঙালির এক মনীষীর উদ্দেশে পাঠানো বাঙালি জাতির আরেক মহানায়কের বার্তা কলকাতার আকাশে-বাতাসে আরও একবার ধ্বনিত হবে।  

সুগত বসু বলছিলেন, ‘ঐতিহাসিক স্পুলটি বহু বছর কিন্তু নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর আর্কাইভে অযত্নে ও অলক্ষ্যেই পড়ে ছিল। যেহেতু আজকাল আর স্পুলে অডিও রেকর্ড করাই হয় না, তাই অনেকে বুঝতেই পারেননি ওর মধ্যে কী সোনালী সম্পদ লুকিয়ে আছে।’

পরে স্পুলটি থেকে অডিও ক্লিপটি ডিজিটালি রূপান্তরিত করে সযত্নে সংরক্ষিত করা হয়। আশ্চর্যজনকভাবে অত পুরনো ক্লিপ হলেও অডিও কোয়ালিটি কিন্তু এতটুকুও খারাপ হয়নি।

২০১৮ সালের মে’তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কলকাতা সফরে এসে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো পরিদর্শন করেন, তখন তার হাতে সেই ঐতিহাসিক অডিও ক্লিপের একটি ডিজিটাল সংস্করণ উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়।

নেতাজির স্মৃতিচারণায় নিজের পিতার কণ্ঠস্বর শুনে সেদিন ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী রবিবারের (২৩ জানুয়ারি) অনুষ্ঠানে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো অবশ্য বঙ্গবন্ধুর বার্তা বাজিয়ে শোনাবে সেই ‘অরিজিনাল’ ও পুরনো স্পুল থেকেই।