ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৪ |

EN

বাণিজ্যিকভাবে চাহিদা বেড়েছে লক্ষ্মীপুরের সুপারীর ৬শ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি | আপডেট: বুধবার, নভেম্বর ১০, ২০২১

বাণিজ্যিকভাবে চাহিদা বেড়েছে লক্ষ্মীপুরের সুপারীর ৬শ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা

সুপারি রাজধানীর লক্ষ্মীপুরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বেচাকেনা ' কোটিরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ব্যবসায়ীরা জেলার দালাল বাজার, রায়পুর, খাসেরহাট হায়দারগঞ্জ বাজার থেকে সুপারি কিনে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যান। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশ করে বিভিন্ন গৃহস্থের পুকুর বন্ধক রেখে সুপারি পঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পঁচানো সুপারিতেও দ্বিগুণ আয় হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

 

লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত সুপারি থেকে এবার প্রায় ' কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোগ-বালাই মুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। একই সঙ্গে বাজার মূল্য ভালো থাকায় বাগানিরাও বেশ খুশি। তারা এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে সুপারি বেচা-কেনায়।

 

নতুন উদ্ভাবিত চারা ফেলে আগামীতে আরো ভালো ফলনসহ দ্বিগুণ লাভের সম্ভাবনা রয়েছে জেলায়। জানা যায়, সঠিকভাবে চারা লাগালে যত্ন নিলে ছয় থেকে সাত বছরে সুপারির ফলন আসতে শুরু করে। তবে বেশি ফলন ধরে ১০ থেকে ১২ বছরের পর থেকে। সুপারি গাছ ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

 

একটি গাছে বছরে থেকে পাঁচটি ছড়া আসে। গাছে ফুল আসার পর থেকে ১০ মাস লেগে যায় ফলন পাকতে।   প্রতি ছড়াতে ৫০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত সুপারি থাকে। আগস্ট থেকে সুপারি পাকতে শুরু করে।

 

মার্চ পর্যন্ত সুপারি চলে সংগ্রহ। এতে হেক্টর প্রতি থেকে মেট্রিক টন পর্যন্ত শুকনো সুপারি পাওয়া যায়। সুপারি জেলার অর্থকারী ফসলের মধ্যে একটি অন্যতম ফসল। অর্থকারী ফসল হিসেবে প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী প্রতিটি বাড়ির আশ-পাশে, প্রবেশ পথে, পুকুরপাড়ে, রাস্তার ধারে সারি-সারি সুপারি গাছের দেখা মেলে অহরহ।

 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে।

 

এসব বাগানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোগবালাই মুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় এবার ১৭ হাজার মেট্রিকটন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬শকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে তারা। বর্তমানে সুপারি পাড়া, বাড়িতে উঠানো, বেচা-কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার অধিকাংশ মানুষ। বিভিন্ন হাট বাজারে সুপারিতে এখন ভরপুর। জেলার সবচাইতে বড় হাট বসে সদরের দালাল বাজার রায়পুরের হায়দারগঞ্জ বাজারে। এছাড়া প্রায় সব হাট বাজারে বেচা কেনা হয় সুপারি।

 

অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে এখন সুপারি নিয়ে ব্যাস্ত সবাই। এখানে উৎপাদিত সুপারি ভালো মানের সু-স্বাদু হওয়ায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে। এখানকার সুপারি যাচ্ছে ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাংগুনিয়া, কুমিল্লা, রংপুর, ময়মনসিংহ রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। জেলায় উৎপাদিত সুপারি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে। বর্তমানে কেউ বিক্রি করছেন, কেউবা কিনছেন।  আবার কেউবা প্রক্রিয়াজাত (পানিতে ভিজিয়ে) করে কিছু দিন পর আরো বেশী দামে বিক্রি করার প্রত্যাশায় রয়েছেন। বর্তমানে প্রতি ফোন (৮০ পিছ) সুপারি বিক্রি হচ্ছে-১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

 

করোনার এই ক্রান্তিকালে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান বাগানীরা। পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে বলে জানান। কেউ বাগান মালিকের কাছ থেকে ইজারা নেন আবার কেউ পরিচর্চায় অর্থ আয় করেন। আবার সময়ে সুপারি পাড়ায় শ্রমিক খেটেও অনেকের বাড়তি আয় হয় বলে জানান। এদিকে সুপারীর নতুন উদ্ভাবিত জাত নিয়ে নতুন সম্ভাবনাসহ সুপারি বিপ্লব ঘটানোর প্রত্যাশায় রয়েছেন জেলাবাসী।

 

জাতের সুপারি বছরে দুইবার ফলন দেয়ার সংবাদ জানলেও তা এখনো পোঁছায়নি। তবে এসব চারা সরবারাহ হলে দ্বিগুন অর্থ আয়ের স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান বাগানীরা। 

 

এদিকে সুপারি সম্ভাবনা নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক . মো. জাকির হোসেন বলছেন, সুপারিতে রোগ বালাই কম থাকা পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার ৬শকোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হবে জেলায়।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নতুন একটি চারা উদ্ভাবন করেছে। কৃষকদের সরবরাহ করা হলে বছরে দুইবার সুপারি পাবে চাষীরা। এতে অর্থনৈতিক সুবিধা আরো বাড়বে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।