ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪ |

EN

প্রথমবার আনারস চাষে সফলতার হাতছানী

এবার দিনাজপুরের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: রবিবার, জুলাই ১৬, ২০২৩

এবার দিনাজপুরের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ
সড়কের পাশে চারিদিকে সবুজ বাগান, প্রতিটি গাছে ধরে আছে বড় বড় আনারস। এবার ধানের জেলা দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় আনারস চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। সিলেট বা টাঙ্গাইলের মতোই রসালো মিষ্টি এবং আকার ও স্বাদ একই এই আনারসের।

ফুলবাড়ী পৌর এলাকার তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক নূরুন্নবী আশিকি বাবুল (৪৫), তাঁর আমবাগানের মধ্যে দেড় একর জমিতে প্রথমবার 'ক্যালেঙ্গা' জাতের আনারস চাষ করে সফল হয়েছেন। এতে এই এলাকার কৃষিতে যোগ হয়ে এক নতুন মাত্রা।

নূরুন্নবী আশিকি বাবুল তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃ. সিরাজুল ইসলাম এর ছেলে। তিনি বর্তমানে দিনাজপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট হিসেবে কর্মরত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে,পরীক্ষা ম‚লকভাবে এখানে আনারস চাষে সফল হয়েছে। প্রথমবার আনভরস ধরতে ১৮ মাস সময় লাগে। একটি গাছ থেকে চার পাঁচটি করে 'ক্রাউন' পাওয়া যাবে। সেগুলো চারা হিসেবে বিক্রি করা যাবে বা অন্য জমিতে লাগানো যাবে। এখন বাণিজ্যিকভাবে এ অঞ্চলে আনারস চাষ করা যাবে বলে তারা আশা করছেন।

নূরুন্নবী আশিকি বাবুল জানান,২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর বেড়াতে গিয়ে আনারস বাগান দেখেন। বাগানের আনারস গাছের সাথে জন্মানো আগাছা ও মাটির গুনাগুন দেখে, তার মনে কৌতুল জাগে একই রকম মাটি আমাদের এলাকায় এবং যেসব আগাছা জন্মিয়েছে সেগুলো আমাদের মাটিতেও জন্মায়, তখন তার মাথায় আসে আমাদের এলাকায় আনারস চাষ হতে পারে।

তিনি বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি আমাদের এলাকায় ঝোপঝাড়ে জঙ্গলে এক সময় আনারস হতো। সেই সব চিন্তা থেকে আনারস চাষের চিন্তা মাথায় আসে।

এরপর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে টাঙ্গাইল থেকে 'ক্যালেঙ্গা' জাতের সাড়ে ২২ হাজার চারা এনে নিজের দেড় একর জমিতে রোপন করেন। ফলন ভাল হয়েছে বর্তমানে ফল পরিপক্ক হতে শুরু করেছে, ১৮ মাস হলে হার্ভেস্টিং শুরু করবেন। ইতোমধ্যেই তার প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম অবস্থায় খরচ একটু বেশী হলেও আগামীতে তা আর হবে না। কারণ তার রোপিত আনারস ক্ষেত থেকেই ৩০ হাজারের অধিক চারা পাওয়া যাবে। তিনি আশা করছেন সঠিক ভাবে বাজার ধরতে পারলে প্রায় ৯ লাখ টাকার আনারস বিক্রি হবে।

তার আনারস চাষ দেখে এলাকার অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। স্থানীয় কৃষকরা জানায়,বাবুলের আনারস চাষ দেখে তারাও এই ফল চাষের পরিকল্পনা করছেন।

ইতোমধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলার শীবনগর ইউনিয়নের একজন কৃষক এবং পাশের উপজেলা নবাবগঞ্জের একজন কৃষক আনারস চারা ক্রয় করে চাষাবাদ করতে তাকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামীতে আরও বেশী জমিতে আনারস চাষ বৃদ্ধি করে চাষ করার ইচ্ছে আছে বলেও তিনি জানান।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শাহানুর রহমান বলেন, প্রথমবারের মত আনারস চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক নূরন্নবী বাবুল। এতে এই উপজেলার কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তার উৎপাদিত আনারস রসালো-মিষ্টি এবং অসাধারণ স্বাদের। ওই এলাকায় আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সবসময় ওই কৃষকের সাথে যোগযোগ করে খোঁজ খবর রাখছেন। তার আনারস ক্ষেতের কোন ধরনের সমস্যা হলে কৃষি দপ্তর থেকে প্রয়োজনী সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার সব মাটিই আনারস চাষের উপযোগী নয়। কারণ আনরস চাষের জন্য অতিরিক্ত  মাটির প্রয়োজন হয়। কেউ যদি আনরস চাষ করতে চায়, তাহলে মাটির  লবনাক্ত পরীক্ষা করে চাষের উপযোগী হলে চাষ করতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে এ অঞ্চলে আনারস চাষ করা যাবে বলেও তিনি আশা করছেন।