ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৪ |

EN

জাহাঙ্গীরের রাজনীতির শেষ অধ্যায় শুরু?

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, অক্টোবর ২৪, ২০২১

জাহাঙ্গীরের রাজনীতির শেষ অধ্যায় শুরু?

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো: জাহাঙ্গীর আলম এখন গভীর সংকটে পরেছেন। তাকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে, সে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন জাহাঙ্গীর।কিন্তু আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, জাহাঙ্গীরের এই জবাবে সন্তুষ্ট নয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অনানুষ্ঠানিকভাবে নিয়ে আলোচনা হয় এবং বিষয়কে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির আগামী বৈঠকে আলোচনার জন্য নির্ধারিত রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

 

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটুক্তি  এবং আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে গাজীপুর সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে প্রথম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গাজীপুর। গাজীপুর বিভক্ত হয়ে যায় এবং সেখানে  সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি শুরু হতে থাকে। গাজীপুরের দুই হেভিওয়েট নেতা আজমত উল্লাহ এবং জাহিদ আহসান রাসেল দুজনই মেয়রের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। যদিও গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন যে তার বক্তব্য সুপার এডিটেড করা এবং তার বক্তব্য সঠিক নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগে এটি নিয়ে তোলপাড়ের প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। জাহাঙ্গীর ইতিমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন। সেখানে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং এটি তার বক্তব্য নয় বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দ্বায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, এই বক্তব্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সন্তুষ্ট নয়। যদি দলটির হাইকমান্ড শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট না থাকেন তবে জাহাঙ্গীর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারাতে পারেন।

 

জাহাঙ্গীরের রাজনীতিতে উত্থান এলাম, দেখলাম, জয় করলামের মতো। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসে তিনি উপজেলা নির্বাচন করেছিলেন এবং সেই নির্বাচনে পরাজিত হন। এরপর গাজীপুরের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং তার কারণেই সেবার আজমত উল্লাহ পরাজিত হয়েছিল বলে অনেকে দাবি করেন। তারপরও আওয়ামী লীগের কিছু কিছু প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে জাহাঙ্গীরের নাটকীয় উত্থান ঘটে। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত দীর্ঘদিনের নেতা আজমত উল্লাহকে বাদ দিয়ে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে বিজয়ী হবার পরপরই জাহাঙ্গীর গাজীপুরের কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে চান। আর এখানেই তার সাথে পুরনো নেতাদের, বিশেষ করে গাজীপুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রয়াত আহসানুল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরী হয়। এরমধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার এই ১৪ মিনিটের অডিওটি আওয়ামী লীগের মধ্যে তোলপাড় তৈরী করে।

 

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন যে, একজন রাজনৈতিক নেতাকে যেভাবে ধীরে ধীরে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠতে হয় সেরকম ঘটনা ঘটেনি জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে। জাহাঙ্গীর রাজনীতিতে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো। এরকমভাবে রাজনীতিতে এসে কেউ বেশীদিন টিকে থাকতে পারে না। অতীতেও যারা হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসে বড় পদ, জায়গা দখল করেছিলেন তারা ধূমকেতুর মতোই বিদায় নিয়েছেন। জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রেও এই ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যে অডিও টেপ নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়েছে সেই বিতর্কে জাহাঙ্গীর যদি রেহাইও পান তারপরও তার রাজনৈতিক উত্থানে ভাটা পরবে এবং গাজী সিটি কর্পোরেশনে তার মেয়াদ শেষ হবার পর আওয়ামী লীগে তার রাজনৈতিক পরিণতি কি হবে তা গভীর অনিশ্চয়তায় পৌছেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে ভবিষ্যতে তার থাকার সম্ভাবনা খুব কম সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। জাহাঙ্গীর আলম রাজনীতিতে আরেকটি শিক্ষা যে, ত্যাগ শিকার না করে হঠাৎ করে অনেক কিছু পেয়ে গেলে তা ক্ষণস্থায়ী হয়। জাহাঙ্গীরের রাজনীতির শেষ অধ্যায়ের শুরু হতে যাচ্ছে বলেও অনেকে মনে করছেন।