ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৪ |

EN

বিনা পুঁজিতে রমরমা আইসের কারবার

বিশেষ প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, অক্টোবর ১৭, ২০২১

বিনা পুঁজিতে রমরমা আইসের কারবার
একদিকে চলছে র‌্যাব-পুলিশের ক্রমাগত অভিযান, অন্যদিকে বাজার চাঙা রাখতে নতুন কৌশলে এগোচ্ছেন মাদক কারবারিরা। শতভাগ বাকিতে দেশে ভয়ংকর মাদক আইস পাঠাচ্ছেন মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা। বিক্রির পর হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে অর্থ। তা ছাড়া, বিক্রির আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদক ধরা পড়লে কোনো টাকাই পরিশোধ করতে হচ্ছে না। বিনা পুঁজিতে এমন ব্যবসায় তাই আকৃষ্ট হচ্ছেন দেশীয় কারবারিরা।

দেশে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ (আইস) ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম দুই হোতাকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানতে পেরেছে র‌্যাব। র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫-এর যৌথ অভিযানে গতকাল শনিবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মো. হোছেন ওরফে খোকন (৩৩) ও সহযোগী মোহাম্মদ রফিক (৩২)।

শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গ্রেপ্তারের সময় দুজনের কাছ থেকে ৫ কেজি ৫০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়, যা দেশে জব্দ করা আইসের সবচেয়ে বড় চালান। জব্দ হওয়া আইসের বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাঁদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল, ৩টি মিয়ানমারের সিমকার্ড এবং মাদক কারবারে লগ্নি করা ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

হোছেন ও রফিকের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ইয়াবার সঙ্গে আইসের কারবার ছড়িয়ে দিতে দেশি কারবারিদের অনেক সুযোগ দিচ্ছে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা। এক গ্রাম আইসের দাম মিয়ানমার কারবারিরা রাখছে ২-৩ হাজার টাকা, যা বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে ১৫-২৫ হাজার টাকা। লাভজনক হওয়ায় আইসে ঝুঁকছে মাদক কারবারিরা। দুই দেশের মাদক কারবারিদের মধ্যে এতটাই সুসম্পর্ক যে, কোনোভাবে আইসের কোনো চালান যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক জব্দও হয়, তবে সে জন্য কোনো ধরনের পেমেন্ট নেয় না মিয়ানমারের কারবারিরা।

মঈন জানান, গ্রেপ্তার হোছেন ওরফে খোকন টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। কাপড়, বার্মিজ আচার ও চায়ের ব্যবসার কথা বলে হোছেন অবৈধভাবে মিয়ানমারে যাতায়াত করেন। আড়ালে মূলত তিনি ইয়াবাই নিয়ে আসতেন। কয়েক মাস ধরে তিনি আইসের চালান আনতে শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের সুসম্পর্ক রয়েছে। হোছেনের নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ অন্তত সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

অপর গ্রেপ্তার মোহাম্মদ রফিককে নিয়ে মঈন জানান, রফিক পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। মিয়ানমার থেকে নৌপথে টেকনাফে আনার পর ইয়াবা ও আইসের চালান রফিকই অটোরিকশায় করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়ে আসছিলেন।

ঢাকায় কীভাবে আইসের চালান আসছে—জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যবর্তী সমুদ্রপথ এলাকায় মালবাহী বোটে করে আসছে ইয়াবা ও আইসের চালান। এরপর আচারের প্যাকেট, বিভিন্ন চায়ের ফ্লেভারের প্যাকেট ও বার্মিজ কাপড়ের প্যাকেটে এগুলো ঢাকায় আনা হচ্ছে।

র‌্যাব জানায়, ক্রিস্টাল মেথ সেবনের ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।