নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, অক্টোবর ৪, ২০২১
একটি
কন্যাশিশুকে
কোলে
নিয়ে
পাঠদান
করছেন
শিক্ষক।
এমন
ছবি
ফেসবুকে
ছড়িয়ে
পড়েছে।
জানা
যায়,
ঘটনাটি
আজ
রোববার
সকাল
সাড়ে
১০টার।
ঘটনাস্থল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
চিনাইর
আঞ্জুমান
আরা
উচ্চ
বিদ্যালয়।
ওই
শিক্ষকের
নাম
পঙ্কজ
মধু
(৪৫)।
গোপালগঞ্জ
জেলার
কোটালিপাড়া
উপজেলার
বেদকাচিয়া
গ্রামের
লিও
মধুর
ছেলে।
তিনি
বর্তমানে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জেলা
শহরের
দাতিয়ারা
পৌর
এলাকায়
বসবাস
করছেন।
ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর খোঁজ নিয়ে
জানা যায়, শিক্ষক পঙ্কজ
মধুর কোলে শিশুটি আসলে
তাঁরই এক ছাত্রীর। দশম
শ্রেণির ওই ছাত্রীর (১৫) করোনার ছুটির মধ্যে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের
ঠিক এক বছরের মাথায়
তার কোল জুড়ে আসে
একটি কন্যাসন্তান। বিয়ের পর পড়াশোনা প্রায়
বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। এর
মধ্যে স্কুল খোলে। তখন শিক্ষক পঙ্কজ
মধু জানতে পারেন দশম শ্রেণির এক
ছাত্রী স্কুলে আসছে না।
তিনি নিজেই খোঁজ
নিয়ে জানতে পারেন ওই ছাত্রীর বিয়ে
হয়ে গেছে। স্বামীর বাড়িতে খবর পাঠান স্কুলে
আসার জন্য। আজ সকালে সন্তান
কোলে নিয়েই স্কুলে আসে সেই শিক্ষার্থী।
কিন্তু পাঠে মনোযোগ দিতে
পারছিল না। তাই শিক্ষার্থীর
সন্তানকে কোলে নিয়েই পাঠদান
করেন পঙ্কজ মধু। তখন কেউ
ছবিটি তুলে ফেসবুকে পোস্ট
করে। দ্রুতই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের
প্রতি ভালোবাসা ও একজন শিক্ষক
হিসেবে পঙ্কজ মধুর শিক্ষার্থীদের প্রতি
দায়িত্বের পরাকাষ্ঠা দেখানো সবাইকে মুগ্ধ করেছে। প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
আজ বিকেলে শিক্ষক
পঙ্কজ মধুর সঙ্গে ফোনে
যোগাযোগ করা হয়। তিনি
বলেন, কখন যে ছবিটি
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লো তা আমার
জানা নাই। আর ভাইরাল
হওয়ার জন্যও আমি এই কাজটা
করিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা অসুবিধার কথা আমি সব
সময়ই চিন্তা করি। আমি যখন
জানতে পারলাম করোনাকালে যখন স্কুল বন্ধ
ছিল তখন দশম শ্রেণির
এক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়।
সে কারণে সে স্কুলে আসতে
পারেনি। বিষয়টি জেনে আমার অনেক
খারাপ লাগলো। তখন আমি তার
সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। আজ সে তার
স্বামী ও তাদের কোলের
সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসে।
তখন সেই ছাত্রী ও
তার স্বামীকে আমি বুঝাই পড়ালেখা
চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন সেই শিক্ষার্থী
তার কোলের শিশুকে নিয়েই শ্রেণিকক্ষে বসে। কিন্তু শিশু
কোলে নিয়ে ভালো মতো
মনোযোগ দিতে পারছিল না।
তাই আমি বাচ্চাটিকে কোলে
নিয়ে ক্লাস করাচ্ছিলাম।
পঙ্কজ মধু আরও বলেন,
শিক্ষকতা খুবই পবিত্র একটি
পেশা। আমি ভালোবাসি এই
পেশাকে ও শিক্ষার্থীদের। আমার
শিক্ষকতার বয়স ২১ বছর
পার হয়েছে। চেষ্টা করেছি একজন শিক্ষক হিসেবে
আমার সর্বোচ্চ দায়িত্বটুকু পালন করতে।
ছবিটি ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন চিনাইর অঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়েরই
সাবেক শিক্ষার্থী ইমরুল হাসনাত চৌধুরী সৈকত। তিনি বলেন, ঘটনাটি
আজ সকালের। সেই স্কুলের একজন
শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানান। এরপর ফেসবুকে ছবিটি
আমি পোস্ট করি। তিনি একজন
ভালো শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের প্রতি স্যার অনেক দায়িত্ববান।
এ ব্যাপারে চিনাইর
আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি আপনার মাধ্যমে
বিষয়টি জেনেছি। পঙ্কজ মধু শিক্ষক হিসেবে
খুবই আন্তরিক। শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি খুবই দায়িত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করেন। পঙ্কজ
মধু ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে
দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করান। পুরো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের
মুখে মুখে তাঁর সুনাম।
পঙ্কজ মধু শিক্ষার্থীদের মনে
ভালোবাসার ছাপ ফেলেছেন। আমি
তাঁর সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি।