ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

ফেসবুকের কল্যাণে ৭০ বছর পর মাকে পেলেন ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১

ফেসবুকের কল্যাণে ৭০ বছর পর মাকে পেলেন ছেলে

১০ বছর বয়সে চাচার সঙ্গে রাজশাহীর বাগমারায় ঘুরতে গিয়েছিলেন শিশু আবদুল কুদ্দুস মুন্সি। এরপর হারিয়ে যান তিনি। বসবাস শুরু করেন বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে। এরপর কেটে গেছে ৭০ বছর। সেই শিশু আবদুল কুদ্দুস এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ।

 

দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সন্ধান না পাওয়া আব্দুল কুদ্দস শেকড়ের সন্ধান শুরু করেন বছরের এপ্রিল মাসে। কিভাবে হারিয়েছেন; কোন গ্রামে ছিলেন; গ্রামের বর্ণনা নিজের পরিবারের দিয়ে পোস্ট করেন ফেসবুকে। মুহূর্তের মধ্যেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন গ্রুপে পেজেও শেয়ার করা হয়।

 

ওই মাসেই পোস্টটি তার এক ভাতিজার চোখে পড়ে। তার চাচার বর্ণনা অনুযায়ী প্রায় সবকিছু মিলে যায়। তার ভাতিজা হারিয়ে যাওয়া চাচার কথা জানান পরিবারের কাছে। এরপর ফেসবুকে তাদের যোগাযোগ কথা হয়। এরপর নিজের সবকিছু খুলে বলে শেকড় খুঁজে পান তিনি। তারপর শুরু হয় পরিবারের সাথে যোগাযোগ। পরিবারের সবার সাথে ভিডিওকলে কথা শুরু করেন।

 

আব্দুল কুদ্দুসের জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বাড্ডা গ্রামে। এখনো আবদুল কুদ্দুসের মা এক বোন বেঁচে আছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল শনিবার নিজ জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন আশীতিপর এই বৃদ্ধা।

 

অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছেলের সন্ধান না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিল পরিবার স্বজনরা। দীর্ঘ সময়ের প্রতিটি দিন ছেলের জন্য পথ চেয়ে কাটিয়েছেন তার মা। এরই মধ্যে মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন তিনি। সময় সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত।

 

বারুইপাড়া গ্রামের স্থানীয়রা জানান, বাগমারা এলাকায় শিশু অবস্থায় হারিয়ে যান আব্দুল কুদ্দুস। এরপর থেকে উপজেলার বাড়ুইপাড়া গ্রামে সংসার শুরু করেন তিনি। হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার নানা চেষ্টা করে যান তিনি। তবে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সন্ধান মেলেনি।

 

অবশেষে গত এপ্রিলে আইয়ূব আলী নামে পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন আব্দুল কুদ্দুস। সেখানে তিনি শুধু বাবা-মা নিজ গ্রামের নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে কুদ্দুসকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা। আইয়ুব আলীর ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টে নিজের শেষ ইচ্ছা হিসেবে নিজের পরিবারের সঙ্গে একবার হলেও দেখা করার কথা লেখেন।

 

নিজের পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার পর আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। দীর্ঘদিন পর হলেও আমার ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে। আমার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি। আগামী শনিবার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হবো। আমার মায়ের সঙ্গে দেখা হবে এটার চেয়ে ভালোলাগার কিছু হতে পারে না।

 

বাড়ুইপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের এক প্রতিবেশী বলেন, সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা সবাইকে বলতেন। কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। অবশেষে ফেসবুকে লেখার পর তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে। ঘটনায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। দীর্ঘদিন পর একটা মানুষ তার একান্ত আপনজনদের খোঁজ পেয়েছেন। এছাড়া তার জন্মস্থানের মানুষ এখন থেকে আমাদের এখানে আসবে। আবার আমরাও নতুন এক জায়গার কিছু মানুষের সঙ্গে নতুন করে আত্মীয়তার সুযোগ পাবো।

 

ফেসবুকে পোস্টদাতা আইয়ুব আলী বলেন, গত ১২ এপ্রিল আব্দুল কুদ্দুসের ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও তার ফেসবুক পেজে আপলোড করেছিলেন। আর ফেসবুকের ওই পোস্টের ওপরে লিখে ছিলেন যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বৃদ্ধ আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে হারিয়ে গিয়ে পরিবার থেকে এতগুলো বছর বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন। কেউ যদি তার কথা শুনে চিনতে পারেন তাহলে যোগাযোগ করুন। এরপর বাকিটা ইতিহাস। সাড়া পড়ে যায় এবং পরিবারের খোঁজ মেলে।

 

সুত্র: ঢাকাটাইমস