জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
ঝালকাঠি
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে যাওয়া আরাফ ও আয়ান নামের ১৬ মাসের দুই যমজ সন্তান
এখন তাদের দাদির কাছে।
রোববার
(১৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে দাদি এসে শিশু দুটিকে নিজ জিম্মায় নেন। এর আগে
স্বামী ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন না করায় মা সুমাইয়া আক্তার শিশু দুটিকে রেখে
চলে যান।
পুলিশ
সূত্রে জানা গেছে, শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন কাঁঠালিয়া থানা পুলিশের কনস্টেবল পদে
কর্মরত। বর্তমানে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন ইমরান হোসেন।
তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে।
সদর
থানা থেকে ইমরানকে বিষয়টি জানানো হলে তার মা রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিশু দুটিকে নিয়ে
যান। দাদির কাছে যাওয়ার পরপরই কান্না থেমে যায় তাদের। ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, যমজ দুই শিশুকে রাতেই ওদের দাদির জিম্মায় দেওয়া
হয়েছে।
২০১৯
সালের মে মাসে সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় কনস্টেবল ইমরানের। দাম্পত্য কলহের জেরে
এ বছরের মার্চ মাসে ইমরান তার স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠায়। তালাক নোটিশ পেয়ে সুমাইয়া
আক্তার তার স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করেন । শিশু দুটির মা সুমাইয়ার আক্তারের দাবি
তালাক নোটিশ পাঠানোর আরও আগে থেকে তার এবং সন্তানদের কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছে না ইমরান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা
জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে একজন নারী তার দুই শিশু সন্তানকে এসপি অফিসের চেক পোস্টের
দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে যান। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান, তোমাদের সন্তান
তোমাদের কাছেই থাক। পরে শিশু দুটিকে সন্ধ্যায় ঝালকাঠি সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শিশু
দুটির কান্নায় থানার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। সুমাইয়া আক্তার ফোনে জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর
থেকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু দুটি ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। রোববার
সকালে চিকিৎসকরা শিশু দুটির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। এতে প্রায় প্রায় ৬
হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল।
বিষয়টি
কনস্টেবল ইমরানকে জানানো হলে তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই বাধ্য হয়ে শিশু
দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতের জন্য যাই। কিন্তু প্রধান ফটকের
সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমরান মিয়া ও মো. সুমন নামে দুই পুলিশ সদস্য আমাকে
ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে
রেখে চলে এসেছি। কারণ ওদের লালন পালন করার মতো টাকা পয়সা আমার নেই।
কনস্টেবল
ইমরান মোবাইল ফোনে জানান, প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য আমি তিন হাজার টাকা
সুমাইয়ার ব্যাংক হিসেবে পাঠাই। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের খোঁজখবর নেই। কিন্তু
মা হয়ে সে কীভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেল? ঝালকাঠি সদর
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি দুই পরিবারের
সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। শিশুদের দাদা দাদিকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা
আসলে শিশু দুটিকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে।