সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন স্বজনরা। এমন অভিযোগের পর বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল আড়াইটার দিকে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী ও স্বজনদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
মৃত্যু হওয়া ওই রোগীর নাম ফুলজান বিবি। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইসলামাদ গ্রামের বাসিন্দা। তার ছেলেদের অভিযোগ, তিনদিন আগে ভুল চিকিৎসায় তাদের মায়ের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর পরও তাদের এ সংবাদ না দিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়। আজ এ খবর জানানোর পর আইসিইউর বিলের জন্য লাশ আটকে রাখা হয়। এরপর তারা হাসপাতালে কথা বলতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালের ভেতরে নিরাপত্তাকর্মী ও রোগীর স্বজনদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. আবেদ হোসেন। তিনি জানান, ‘পেটে টিউমার নিয়ে ওই নারী হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রথমে ভাবা হয়েছিল এটি গাইনি সমস্যা। তবে গত সোমবার অপারেশনের সময় দেখা যায় টিউমারটি তার নাড়িভূড়ির মধ্যে। পরে জেনারেল সার্জনরা এই অপারেশন করেন।
তিনদিন আগে রোগীর মৃত্যু হয়েছে- স্বজনদের এমন অভিযোগে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। অপারেশনের পরে পর্যবেক্ষণে থাকা অবস্থায় রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন। যা প্রতি মুহূর্তে রোগীর স্বজনদের জানানো হয়।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান জানান, রোগীর মৃত্যু নিয়ে স্বজন ও হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
এ ঘটনার বিকেল ৩টার দিকে হাসপাতালের অদূরে পাঠানটুলা পয়েন্ট এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখেন সিলেট জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ শ্রমিকরা। তারা বলছেন, ভুল চিকিৎসায় তাদের এক নেতার মায়ের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে, এমন অভিযোগ তুলতে হাসপাতালে স্বজনদের মারধর করা হয়েছে। তারা বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন।
পরে সেখানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে সাড়ে ৪টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, অবরোধকারী শ্রমিকদের সঙ্গে তারা কথা বলেন। তাদের থানায় অভিযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নিয়েছেন।