নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
নাটোরের
লালপুর উপজেলায় মোর্শেদ আলী পদ্মলোচন ‘মনসা’
পালা গানের আসর বসিয়েছেন তাঁর
বাড়িতে। তিন বছর আগে
মেয়ের নামে করা মানত
পূরণের জন্য তাঁর এই
আয়োজন।
গত
সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার মোহরকয়া
গ্রামের নিজ বাড়িতে বসে
এই আসর।
মোর্শেদ
আলী জানান, ছোট বেলায় তিনি
অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর
দাদি তাঁর জন্য পদ্মলোচন
‘মনসা’ পালা গানের মানত
করেছিলেন। এরপর তিনি ভালো
হয়ে যান। কিন্তু সে
মানত পুরো করতে পারেননি
তিনি। তার ধারণা সে
প্রভাব পড়েছে তাঁর মেয়ে রুবি
খাতুনের (১৪) ওপর। তাঁর
মতে, মানত পূরণ না
করতে পারলে, সাত পুরুষ পর্যন্ত
অভিশাপের প্রভাব থাকে। তাই এ বছর
৫০ হাজার টাকা খরচ করে
মানত পূরণ করতে ৭
দিন ব্যাপী মনসা পালা গানের
আয়োজন করেছেন তিনি।
গত
সোমবার দিবাগত রাত ১১টায় নাটোরের
লালপুরের মোহরকয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,
শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে বসানো হয়েছে পালা গানের আসর।
আলোক সজ্জায় ঝলমল করছে। গ্রামের
নারী-পুরুষের ঢল নেমেছে আসরে।
নাচ-গানের ছন্দে বিমোহিত হয়ে সবাই শুনছেন
মনসা পালার কাহিনি। আট্টিকা গ্রামের দলনেতা সবুজের নেতৃত্বে ১২ জন পালা
গান করছেন। এদের মধ্যে একজন
হিজড়া ছাড়াও আরও দুজন পুরুষ
নারীর ভূমিকায় নাচ-গান করছেন।
গানের তালে তাঁদের নাচের
ঝংকারে দর্শকের মনে আনন্দের ফোয়ারা
ছড়াচ্ছে।
আট্টিকা
গ্রামের পালা দলের নেতা
সবুজ বলেন, প্রায় ৪৫ বছর আগে
এই এলাকায় মনসা পালা গানের
প্রচলন করেন কুষ্টিয়ার ওস্তাদ
আব্দুল আলীম (৮০)। তাঁর
হাত ধরে লালপুরে তিনিসহ
তাঁর গ্রামের জিল্লুর রহমান ও সাজদার রহমান
এবং সালামপুর সাঁওতালপাড়ার মোস্তাকের নেতৃত্বে চারটি মনসা পালা দল
গান পরিবেশন করেন। এ ছাড়া কুষ্টিয়া,
বাঘাসহ বিভিন্ন এলাকার পালা দল লালপুরে
ভাড়া খাটতে আসেন। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের
সংক্রান্তি থেকে শুরু হয়ে
আশ্বিন ও কার্তিক মাস
পর্যন্ত মনসা পালার মৌসুম।
এ ছাড়া শীতেও কিছু
ডাক পড়ে।
তিনি
আরও বলেন, গত বছর ৩৫টি
স্থানে পালা পরিবেশন করেন।
দেবী মনসার জন্য উৎসর্গকৃত প্রতিটি
পালা ৩ থেকে ৭
দিন ধরে চলে। বিকেল
৫টা থেকে রাত ১২টা
পর্যন্ত বসে পালা গানের
আসর। প্রতিটি পালা ২০ থেকে
৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে ১০-১২ জনের দল
পরিবেশন করেন। এ বছর ৭টি
পালা সম্পন্ন করেছেন তাঁরা।
পালা
দলের সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, এটিকে তাঁরা আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
দিনের বেলায় খেত-খামারে মজুরের
কাজ শেষ করে বিকেল
থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত
পালায় খেটে বাড়তি অর্থ
উপার্জন করেন। তা ছাড়া সারা
বছর স্বাভাবিক কাজ করে সংসার
চালান।
মোহরকয়া
ফোকলোর চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ও মোহরকয়া ডিগ্রি
কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. ইসমত
হোসেন বলেন, পদ্মলোচন মনসা পালাগান আমাদের
গ্রামীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যা প্রায় হারিয়ে
যেতে বসেছে। তবে মানতের ধারণা
একটি কুসংস্কার। আর ইসলাম ধর্মীয়
দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ শিরক ও নিষিদ্ধ।