ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, মে ২৭, ২০২৪ |

EN

আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অচেনা শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, জুলাই ২৪, ২০২২

আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অচেনা শেখ হাসিনা
রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতায় শেখ হাসিনা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার সমতুল্য এখন কেউ নেই। বরং নিজ যোগ্যতায় এবং মেধায় তিনি অন্যান্য রাজনীতিবিদের চেয়ে অনেক বড় দূরত্ব তৈরি করেছেন। শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক নেতা নয়, বিশ্বের একজন রাজনৈতিক নেতা।

বিশ্ব রাজনীতিতে বিচক্ষণতার মেধায় তিনি অন্যতম একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বীকৃত। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে শেখ হাসিনা ক্রমশ অচেনা হয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত যেভাবে রাজনীতির চর্চা করেন, সেটি আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারা করেন না। যার ফলে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন যেমন তারা বুঝতে পারেন না, ঠিক তেমনি ভাবে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা তারা ধারণও করতে পারেন না, উপলব্ধিও করতে পারে না। এর ফলে প্রতিনিয়তই তাদেরকে নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

সর্বশেষ আওয়ামী লীগের নেতারা হোঁচট খেলেন গত শনিবার। ওই দিন শোকের মাসকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর এক যৌথসভায় বসেছিল। ওই যৌথসভায় অনলাইনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি সেই সভায় বিরোধী দলের আন্দোলনকে স্বাগত জানান এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে যেন বাধা না দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এমনকি তারা যদি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অভিমুখে আসে তাহলে তাদেরকে যেন বাংলামটরে বাধা না দেওয়া হয়, তাদেরকে যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে আসা হয়, প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্য শুনতে চান, তাদের চা খাওয়াতে চান। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতাদের এতদিনের যে অবস্থান তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিরোধীদলকে তুলোধুনো করেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলনের ব্যাপারে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। তিনি বলেছেন রাজপথে বিএনপি আন্দোলন করার সক্ষমতা নেই, বিএনপি মিডিয়ায় গর্জন করছে। বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদও। কিন্তু এই সমস্ত বক্তব্যে যে বিরোধী দলকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা হেয় প্রতিপন্ন করার যে ঝোঁকটা ছিলো, সেটির সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান দেখালেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরং তিনি সুস্পষ্টভাবে বিরোধী দলের আন্দোলনকে সম্মান জানালেন এবং বিরোধী আন্দোলন যে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির একটি অংশ, সেটিকে তিনি বুঝিয়ে দিলেন। শেখ হাসিনার এই অবস্থান রাজনীতিতে যেমন চমক তেমনি আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছেও একটা বড় ধরনের বিস্ময়। শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ক্রমশ দুর্বোধ্য হয়ে উঠছেন, শেখ হাসিনা চিন্তা-দর্শন তারা যে বুঝতে পারছেন না, এই ঘটনাটি তার একটি বড় প্রমাণ। এবারই প্রথম নয়, এর আগে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়। সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতারা সংলাপের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন যে, বিরোধী দলের সাথে কিসের সংলাপ, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু যখন ড. কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান জানানো হলো তখন প্রধানমন্ত্রী সেই আহ্বান সাদরে গ্রহণ করে বিরোধী দলের নেতাদেরকে গণভবনে দাওয়াত দিলেন। এর মধ্য দিয়েই ২০১৮ সালের রাজনীতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের নেতারাই যদি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক চিন্তা অনুধাবন না করতে পারেন, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতারা কোন আদর্শের চর্চা করেন?